নিখোঁজ হওয়ার ২৬ দিন পর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শিশু আবু হোরায়রার (৮) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একটি ফোনকলের সূত্র ধরে পুলিশ মোহাম্মদ মোমেন (২৪) নামের এক রাজমিস্ত্রিকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার রাতে একটি পুরনো কবরের ভেতর থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মোমেন স্বীকার করেছেন, বাবার সঙ্গে পূর্ব শত্রুতার জেরে শিশু হোরায়রাকে তিনি খুন করেছেন।
খরগোশ ধরে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে হোরায়রাকে ডেকে নিয়ে যান তিনি। গ্রামের একটি কবরস্থানে নিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যার পর লাশ একটি পুরনো কবরে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
মোমেনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোমবার দুপুর ২টায় তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। হোরায়রার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক জানান, সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের আব্দুল বারেকের ছেলে হোরায়রা গত ১৯ জানুয়ারি বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল। সে চুয়াডাঙ্গা ভিজে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। নিখোঁজ হওয়ার দিনই তার বাবা আব্দুল বারেক থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ২৫ জানুয়ারি তিনি চারজনকে আসামি করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় এজাহার দায়ের করেন। এজাহারের ভিত্তিতে হোরায়রার প্রাইভেট শিক্ষক রঞ্জু হক ও তাঁর ভাই মঞ্জু হককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এজাহার থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন হোরায়রা বাড়ি থেকে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে প্রাইভেট শিক্ষক রঞ্জু হকের বাড়িতে যায়। সেখানে ব্যাগ রেখে সে বাইরে চলে যায়। তারপর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল।
হোরায়রা নিখোঁজ হওয়ার পর গ্রামের জলাশয়ে অনুসন্ধান করেন চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা। অনুসন্ধানে মাঠে নামে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ ও ঝিনাইদহ র্যাব। খোঁজাখুঁজির সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। কোথাও খোঁজ মেলেনি হোরায়রার।
অনুসন্ধানের একপর্যায়ে একই গ্রামের শহিদুল হকের ছেলে রাজমিস্ত্রি মোমেনের (২৪) একটি ফোনকলের সূত্র ধরে পুলিশ রবিবার তাঁকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হোরায়রাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং গ্রামের তালতলা সরকারি কবরস্থানের একটি পুরনো কবরে লাশ আছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রবিবার রাত ২টায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ তালতলা গ্রামের সরকারি কবরস্থানে গিয়ে আবু হোরায়রার লাশ উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, মোমেন পূর্ব বিরোধের কারণে খুন করে হোরায়রাকে। দুই বছর আগে ঈদের সময় মোমেন ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু উচ্চ শব্দে সাউন্ড বক্স বাজাচ্ছিল। সে সময় সেখানে দিয়ে যাওয়ার সময় হোরায়রার বাবা তাঁদের সাউন্ড বক্স বাজাতে নিষেধ করেন এবং লাথি মেরে সাউন্ডবক্স ভেঙে দেন। ক্ষিপ্ত মোমেন ওই ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই গত ১৯ জানুয়ারি বিকেলে হোরায়রাকে কৌশলে কবরস্থানে নিয়ে যান এবং শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন।
পুলিশ আরো জানায়, এ হত্যা ঘটনায় মোমেনের একজন সহযোগী আছে। তাকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত পুলিশ তার নাম প্রকাশ করতে চায় না।
ফোনকলের সূত্র প্রসঙ্গে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, কিছুদিন আগে মোমেন নিখোঁজ হোরায়রার বাবা আব্দুল বারেককে ফোন করে এবং ১০ লাখ টাকা দিলে তাঁর ছেলেকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান। সেই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে খুঁজে বের করা হয় মোমেনকে। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মোমেন সবকিছু স্বীকার করেন।