ফরিদপুর সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের মজিবুর শেখের দুই ছেলে আছমত শেখ (১৯) ও আশিক শেখ (১৬) আপন দুই ভাই। বয়সে এরা কিশোর ও শিশু হলেও তাদের খুনের ধরণ লোমহর্ষক ও ভয়াবহ। দেখে বোঝার উপায় নেই এরা সিরিয়াল কিলার। দুই ভাই মিলে গত ১৯ দিনের ব্যবধানে অটোরিকশা ও ইজিবাইকের চালক দুই কিশোরকে নৃশংসভাবে খুন করে ইজিবাইক ছিনিয়ে নিয়েছে। দুটি খুনের ঘটনা ঘটিয়ে তারা এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন।
একটি ইজিবাইক বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর দুই দুটি খুনের ঘটনা জানতে পেরে পুলিশ তাজ্জব বনে যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে দুই ভাইয়ের খুনের ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান জানান, ফরিদপুর সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের আলমগীর বিশ্বাসের ছেলে সাব্বির বিশ্বাস (১৪) নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের পদ্মার চর স্কুলে ৮ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করতো। পাশাপাশি ঘোড়ার গাড়ি চালক দরিদ্র পিতাকে সাহায্য করতে অটোরিকশা চালাতো।
গত ১ এপ্রিল সাব্বির বিশ্বাস অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। পরদিন সাব্বির বিশ্বাসের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অম্বিকাপুর ইউনিয়নের উত্তর দয়ারামপুরের একটি মাঠের মধ্য থেকে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহত সাব্বিরের পিতা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করে। পুলিশ জানায়, কিশোর সাব্বিরকে হত্যা করে তার অটোরিকশাটি নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় পুলিশ কোন ক্লু পাচ্ছিল না।
এদিকে ২১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ভোরে কিশোর আছমত শেখ ও তার ভাই আশিক শেখ শহরের গজারিয়া বাজারে একটি ইজিবাইক বিক্রি করতে গেলে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। পরে তারা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুই ভাইকে আটক করে এবং একটি ইজিবাইক উদ্ধার করে। পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ১ এপ্রিল সাব্বির খুনের বিষয়ে। তারা সাব্বিরকে খুন করে তার অটোরিকশাটি নিয়ে যায়। সাব্বিরকে তারা সেভেন আপের মধ্যে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে অজ্ঞান করে নৃশংসভাবে খুন করে। পরে তারা ছিনতাই করা অটোরিকশাটি গোয়ালচামট এলাকার সাবেক কাউন্সিলর খন্দকার মঞ্জুর আলীর কাছে বিক্রি করে দেয়।
পুলিশ ইজিবাইকের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেড়িয়ে আসে আরও একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। আছমত ও আশিক দুই ভাই আগের মতো চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের গোয়ালের টিলা এলাকার ইজিবাইক চালক কিশোর নাইম শেখের ইজিবাইকটি ভাড়া নেবার কথা বলে তাদের বাড়িতে ডেকে নেয়। ইজিবাইক নিয়ে নাইম শেখ আছমত ও আশিকদের বাড়িতে এলে তারা দুই ভাই ও স্থানীয় সাগর মোল্যা নামের এক যুবক নাইমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। একপর্যায়ে নাইমের লাশটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভড়ে বাড়ির মুরগীর ঘরের মধ্যে গর্ত করে সেখানে পুতে রাখে। পুলিশের হাতে আটক দুই ভাইয়ের দেখানো মতে পুলিশ নাইম শেখের লাশটি উদ্ধার করে।
দুই ভাইয়ের পরপর দুটি খুনের ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়রা জানান, কিশোর গ্যাংয়ের সাথে এ দুই ভাই ছাড়াও এলাকার অনেকেই রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। পুলিশ জানায়, আছমত ও আশিক এরা আপন দুই ভাই। স্থানীয়ভাবে এরা বখাটে হিসেবে পরিচিত। বড় ভাই আছমতের বিরুদ্ধে থানায় দুটি মামলা রয়েছে। দুটি খুনের ঘটনার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার কথা তারা স্বীকার করেছে। রিমান্ডে নিয়ে তাদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে আরও কোনো অপকর্মের সাথে তারা জড়িত রয়েছে কিনা।
পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান জানান, কিশোর বয়সে তারা যেভাবে খুন করেছে তা আমাদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। তিনি বলেন, ইজিবাইক ছিনতাই করে যাদের কাছে বিক্রি করা হয় তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।