চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের রাসূলপুর গ্রামে গৃহবধূ রহিমা আক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যার অপরাধে মো: জিয়া (৩২), কামাল মিয়াজী (৩৬), মো: আবুল বাসার (৪৮) ও মোসা: মাহমুদা বেগমকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত। এছাড়া ৯ (১) ৩০ ধারার অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেছে আদালত। এই রায়ে বলা হয়, উভয় সাজা একই সঙ্গে চলমান থাকবে।
মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী এ রায় প্রদান করেন। হত্যার শিকার রহিমা আক্তার রসূলপুর গ্রামের মো: সফিউল্লাহ মিয়াজী’র মেয়ে। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা সবাই একই গ্রামের বাসিন্দা।
মামলার বিবরনে জানা যায়, ২০১১ সালে রহিমা বেগম এর সাথে ঘিলাতলী গ্রামের আবু জাফরের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর রহিমার পিতা-মাতা জানতে পারে আবু জাফর একাধিক মেয়েদের সাথে পরকিয়ায় লিপ্ত। সর্বশেষ জানতে পারেন গৌরিপুর এলাকার হালিমা নামে একটি মেয়ের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক। এনিয়ে আবু জাফর ও রহিমার মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়।
এরই মধ্যে ২০১৩ সালের ১৯ মে রহিমা তার পিতার বাড়ী থেকে স্বামীর কর্মস্থল নারায়নপুর কোল্ড স্টোরে রওয়ানা করেন। পিতার নিকট বলে যান রাতে আবার বাড়ীতে ফিরে আসবেন। কিন্তু রাতে আর ফিরে আসেননি।
পরদিন ২০ মে রহিমার পিতা জামাতা আবু জাফরকে মোবাইল ফোনে জিজ্ঞাসা করলে বলে রহিমা তার কাছে আসেনি। এরপর ২১ মে সন্ধ্যা আনুমানিক পৌনে ৭টার দিকে জামাতা আবু জাফর ফোন করে জানান, একজন মেয়ের মরদেহ রসুলপুর কদম আলীর বাড়ীর পাশে আক্তারের ভুট্টা খেতে পড়ে আছে।
রহিমার পিতা গিয়ে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন। এরই মধ্যে জামাতা আবু জাফর ঘটনাস্থল থেকে কেটে পড়েন। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে মতলব দক্ষিন থানায় নিয়ে আসে।
এঘটনায় রহিমার পিতা মো: সফিউল্লাহ মিয়াজী মতলব দক্ষিণ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে হত্যা ও ধর্ষণের সাথে জড়িত মো: জিয়া, কামাল মিয়াজী, মো: আবুল বাসার ও মোসা: মাহমুদা বেগমকে অভিযুক্ত করে মতলব দক্ষিণ থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এস.আই) লুৎফুর রহমান ৩১ আগষ্ট ২০১৩ তারিখে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
সরকার পক্ষে আইনজীবী (পিপি) সাইয়্যেদুল ইসলাম বাবু বলেন, মামলাটি দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর চলাকালীন সময়ে ১৯ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে আদালত এই রায় দেন। তবে রায় প্রদানকালে আসামী মাহমুদা বেগম পলাতক ছিলেন এবং বাকী ৩ জন উপস্থিত ছিলেন।
রায় প্রদানকালে বাদী রহিমার পিতা মো: সফিউল্লাহ মিয়াজী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আমার মেয়েকে নির্যাতন করে তারা হত্যা করেছে। আমার মেয়ে তো আর পাব না। কিন্তু আদালত যে রায় দিয়েছে তাতে আমি সন্তুষ্ট। রায় কার্যকর হলে, আমার পরিবার শান্তি পাবে। সরকার পক্ষে (এপিপি) ছিলেন, খোরশেদ আলম শাওন এবং আসামী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এড. মো: সফিকুর রহমান ভুঁইয়া।