নওগাঁ সরকারি কৃষ্ণধন (কেডি) উচ্চ বিদ্যালয়ে গাঁজা সেবনের অভিযোগে দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। রোববার (৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কেডি স্কুলের সীমানায় পরিত্যক্ত ভবনের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত দুইজন পুলিশ সদস্য হলেন- কনস্টেবল সুজন হোসেন ও কনস্টেবল আলম হোসেন এবং অপরজন হলেন একজন সরকারি কর্মকর্তার ড্রাইভার কার্ত্তিক সরকার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তদন্তকারী অফিসার এস আই নুর নয়ন।
বিষয়টি দেখতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করলে এক পর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সার্চ করে একটি গাঁজা ভর্তি সিগারেট পাওয়া যায় বলে অভিযোগ করেন উপস্থিত শিক্ষার্থীরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদেরকে নিয়ে এসে ডোপ টেস্টে পাঠিয়ে দেয়।
এদিকে পুলিশ সদস্য শিক্ষার্থীদের হাতে গাঁজা সেবনকালে আটক বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এই প্রতিবেদকের হাতে আসা কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, পোশাক পড়া এক পুলিশকে তাদের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলতে শোনা যায়, রোজার দিন তারা এখানে এসে বিড়ি খাচ্ছিল। পোশাক ছাড়া আরেক পুলিশ সদস্য বলেন, একটা বিষয় নিয়ে এখানে এসে কথা বলছি। তবে তাদের এই যুক্তি মেনে নেননি শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে তাদের এমন কথা শুনে শিক্ষার্থীদের বলতে শোনা যায়, আপনাদের কাজ অফিস রুমে। আপনাদের স্কুলে ঢোকার কোনো বৈধতা আছে কিনা জানতে চাইলে তারা কোনো উত্তর দিতে পারেনি। শিক্ষার্থীরা বলেন, আপনাদের স্কুলে ঢোকার বৈধতা নেই। এখানে ঠিকাদারি কাজ চলছে এই বাহানা দিলেও মানা যেত।
আরও বলতে শোনা যায়, গাঁজা খাচ্ছিল এমন ভিডিও আমাদের কাছে আছে। হাতে একটা সিগারেট সদৃশ বস্তু নিয়ে তাদেরকে বলতে শোনা যাচ্ছে এটা গাঁজার সিগারেট। ‘অবৈধ প্রশাসন, মানি না মানবো না’, ‘পুলিশ কেন গাঁজা খায়, জবাব চাই, বিচার চাই’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এমন সময় একজন চলে যেতে চাইলে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তবে তার মুখে মাস্ক পড়া ছিল। তাই শিক্ষার্থীরা তাকে মাস্ক খুলতে বলেন।
নওগাঁ সদর হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার আবু জার গাফফার জানান, তিনজনকে ডোপ টেস্টের জন্য আনা হয়েছিল। তাদের স্যাম্পল নেওয়া হয়েছে। প্রসেসিং চলছে। যে কোনো সময় রিপোর্ট জানা যাবে বলেও জানান তিনি।
নওগাঁ সরকারি কেডি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ইতিপূর্বে পুলিশ প্রশাসনের কোনো সদস্য এই স্কুলে মাদক সেবন করে কিনা এটা আমার জানা নেই। আজ আমি জানতে পারি, ওই তিনজন নাকি গাঁজা সেবন করেছে, তাদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ছিল। তাই তাদেরকে ছাত্ররা ধরে রেখেছে এবং পরবর্তীতে পুলিশ এসে তাদেরকে নিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটা পবিত্র জায়গা। এখানে যদি কেউ নেশাদ্রব্য নিয়ে আসে বা সেবন করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসি এম এ মান্নান বলেন, খবর পেয়ে কেডি স্কুল থেকে দুইজন পুলিশ সদস্যসহ তিনজনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদেরকে সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে সেখানে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ উপস্থিত ছিলেন। আমরা উনার সহায়ক হিসেবে কাজ করেছি।
এ বিষয়ে নওগাঁ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, সিগারেট অথবা নেশা জাতীয় কিছু খাচ্ছিল, সেই জন্য ডোপ টেস্টে পাঠানো হয়েছে। ডোপ টেস্টের পর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।