সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ২০ থেকে ৩০টি পেজ খুলে বিভিন্ন পণ্যসহ শাড়ি ও থ্রি-পিসের চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারণা চালাতো তারা। বিজ্ঞাপনে এসব পণ্যের বিশাল মূল্যছাড়ের ঘোষণাও দিতো তারা।
এসব পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হত কুরিয়ারের মাধ্যমে। আর তখনই ঘটত যত বিপত্তি। ক্রেতা প্যাকেট খুলে দেখতেন তিনি যেই পণ্যটি অর্ডার করেছিলেন তার পরিবর্তে চক্রটি ছেড়া ও ব্যবহার অযোগ্য কাপড় পাঠিয়েছে। এভাবে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল তারা। কিন্তু এবার রক্ষা হয়নি।
অর্ডার করা পণ্য না পেয়ে যখন চক্রটির সঙ্গে যোগাযোগ করত ক্রেতারা। তখনই ক্রেতাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করত চক্রটি। সর্বশেষ ক্রেতাদের ফোন নম্বর ও ফেসবুক আইডি ব্লক করে দিত তারা।
প্রতারিত এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাজারীবাগের শংকর পশ্চিম ধানমন্ডিস্ত বাড়ি নং ৪৮ এর ৪র্থ তলার ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ। এসময় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ব্যবহার অযোগ্য ও অতি নিম্নমানের পুরাতন ছেড়া শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রি পিচ সহ বিভিন্ন পণ্য-সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- বাপ্পি হাসান (২৪), আরিফুল ওরফে হারিসুল (১৯), সোহাগ হোসেন (২২), বিপ্লব শেখ (২৫) ও নুর মোহাম্মদ (২৮)।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয়ে জানান লালবাগ বিভাগের ডিসি রাজীব আল মাসুদ।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বিষয়টি স্বীকার করেছে। চক্রটি গত ৫-৬ বছর ধরে এই প্রতারণা চালিয়ে আসছে। তারা আকর্ষণীয় পণ্য বিশেষ করে মেয়েদের পোশাকের চকটকদার বিজ্ঞাপন দিত। স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম মূল্য লিখে তারা এসব পোশাকের বিজ্ঞাপন দিত। এসব পণ্য এস এ পরিবহন এ্যালিফ্যান্ট রোড শাখায় কন্ডিশনের মাধ্যমে বুকিং করে অনলাইনে প্রতারণায় টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল।
রাজীব আল মাসুদ বলেন, আমরা তাদের ২১টি ফেসবুক পেজের সন্ধান পেয়েছি, যার মাধ্যমে তারা প্রতারণা করত। ১৭৭টি খারাপ শাড়ি, থ্রি-পিস জব্দ করেছি। এসব কাপড় সাধারণত বাসা বাড়িতে ব্যবহারের পর পুরাতন হয়ে গেলে অনেকে বিক্রি করে দেয়, আবার অনেকে মানুষজনকে দিয়ে দেয়। চক্রটি এসব কাপড় কিনে ডেলিভারি দিত।
ডিসি বলেন, এসএ পরিবহনের সঙ্গে চক্রটির একটি চুক্তি আছে। সেই অনুযায়ী চক্রটির পার্সেল তারা পাঠাত। এছাড়া এসএ পরিবহনের লোকজন জানত চক্রটি এসব খারাপ মালামাল ক্রেতাদের পাঠায়। চুক্তি অনুযায়ী পার-পার্সেল ৫০ টাকা করে নিত তারা। এভাবে তারা প্রতি মাসে প্রতারণা করে ২০-৩০ লাখ টাকা আয় করত। গত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে তারা এই প্রতারণা করে আসছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানায়, তারা একটি পেজ কিছুদিন ব্যবহার করার পর গ্রাহকরা প্রতারিত হওয়ার ফলে বিভিন্ন বাজে কমেন্ট করায় তারা পরে নতুন পেজ খুলে একইভাবে প্রতারণা করতো। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।