একটি কিনলে একটি ফ্রি প্রলোভন দেখিয়ে সিলেটে গ্রাহকদের কোটি টাকা আত্মসাত করে নিয়েছে আঁখি সুপার শপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দুই গ্রাহক ওই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রোববার আদালতে মামলা করেছেন।
সিলেট নগরের বটেশ্বর এলাকায় আঁখি সুপার সপের কার্যালয়। রোববার বিকেলে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ দেখা যায়। তবে ২৯ ডিসেম্বর আঁখি সুপার শপের ফেসবুক পেজ থেকে দেয়া এক পোস্টে জানানো হয়- ‘পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে সাময়িকভাবে আঁখি সুপার শপ বন্ধ রাখা হয়েছে। আপনারা কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। একটু ধৈর্য রাখুন… আমরা আছি… প্লিজ আমাদের কেউ ভুল বুঝবেন না…।
রোববার নগরের শাহপরান উপশহর এলাকার বাসিন্দা মো. জিয়াউর রহমান ও মো. আশরাফ হোসেন বাদী হয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করেন।
মামলার আইনজীবী মো. ফয়সাল আহমেদ বলেন, আসামিরা অনলাইনে পেজ চালু করে প্রতারণা মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা তুলতেন। মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্য একটি কিনলে আরেকটি ফি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে টাকা নিতেন তারা।
তিনি জানান,বলেন, মামলার বাদি আশরাফ হোসেন ৯ লাখ ৬১ হাজার ৭২০ টাকা এবং জিয়াউর রহমান ৩ লাখ ৭ হাজার ২০০ টাকা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরকম শতাধিক গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি টাকা আত্মসাত করেছে এই প্রতিষ্ঠান।আদালতের বিচারক মো. সাইফুর রহমান মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিআইবি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
দুই মামলাতেই আসামি করা হয়েছে আঁখি সুপার শপের কর্মকর্তা রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হাসনীপুর গ্রামের আসমা শারমিন আঁখি (২৬) ও পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পুন্ডুরিয়া গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলমকে (৩১)। এ ছাড়া আরও চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
জানা যায়, আসমা ও জাহাঙ্গীরই এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। সিলেট শহরতলির বটেশ্বর গইলাপাড়া এলাকায় আঁখি সুপার শপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আঁখি সুপার শপ কর্তৃপক্ষ ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ‘একটি পণ্য কিনলে একই পণ্য আরেকটি ফ্রি তথা শতভাগ ক্যাশব্যাক’ বলে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। এ প্রচারণা দেখে দুজন বাদী আরও কয়েকজন সহযোগী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে যান। তারা গত বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দুটি মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস সামগ্রী এবং তেল-দুধ ক্রয়ের জন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, টাকা জমা দেওয়ার পর মামলার দুই বাদীকে প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় মেমোও দেয় এবং দ্রুতই পণ্য বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। তবে সেসব পণ্য যথাসময়ে তারা পাননি। এরপর প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে গিয়ে সেটি বন্ধ দেখতে পান। পরে বিভিন্ন গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ হলে তারা জানতে পারেন, তাদের মতো আরও গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে আসামিরা পালিয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে আঁখি সুপার শপের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে আঁখি সুপার শপ নামের প্রতিষ্ঠানটিও তালাবদ্ধ আছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকেরা সেখানে গিয়ে বিক্ষোভ করেন।
গ্রাহকদের অভিযোগ, আঁখি সুপার শপ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা শুরু করে। এর বাইরে সুপার শপের মাধ্যমেও তারা বটেশ্বর এলাকায় ব্যবসা পরিচালনা করত। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ হতে নানা সময়ে ৯০ দিন এবং ৩০ দিনের একাধিক প্যাকেজ অফার ফেসবুক পেজে জানানো হতো। এসব প্যাকেজে একটি পণ্য কিনলে আরেকটি পণ্য ফ্রি দেওয়া হতো। এ অফারের মধ্যে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ও গ্রোসারি পণ্য থাকত। এ অফারে অনেক গ্রাহক অংশ নিয়ে একটি ক্রয় করা পণ্যের সঙ্গে একই পণ্য আরেকটা বিনা মূল্যে পেয়েছেন।
একাধিক গ্রাহক জানান, গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে আঁখি সুপার শপের পক্ষ থেকে এমন একটি অফার দিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। এ প্রচারণায় প্রলুব্ধ হয়ে অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাহক মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্য কিনতে টাকা জমা দেন। অন্তত ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানটি এভাবে জমা নিয়েছে বলে কয়েকজন গ্রাহক ধারণা করছেন। এই টাকা নিয়েই আসমা ও জাহাঙ্গীর পালিয়ে গেছেন বলে তারা অভিযোগ করেন।
সিলেট মহানগরের শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, আঁখি সুপার শপের প্রতারণার বিষয়টি একাধিক ভুক্তভোগী গ্রাহকের কাছ থেকে শুনেছি। প্রাথমিকভাবে এর সত্যতাও পাওয়া গেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।