অভাবের সংসারে হাল ধরতে কয়েক বছর আগে গাজীপুরের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন। এভাবেই চলছিলো কিন্তু চোখ ভরা স্বপ্ন আর বুক ভরা আশা নিয়ে আরও একটু স্বচ্ছল থাকার আশায় পাতানো ফাঁদে পা রাখেন তরুণী।
নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলার খিলগাঁও গ্রামের অটোরিকশা চালক মো. দুলাল মিয়ার মেয়ে রিবা আক্তার (১৬) এর জীবনে যা ঘটে তা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করেননি কখনো ।
মাত্র দুই মাস আগে রিবার সাথে পরিচয় হয় কথিত সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাকের (৬০) সঙ্গে। আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার টাংগাটি মধ্যপাড়া। বর্তমানে তিনি গাজীপুরের গাছা রোড এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
গত মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) রিবা আক্তারের লাশ অজ্ঞাত অবস্থায় ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার টাংগাটি গ্রামে রাস্তার পাশে ধান ক্ষেত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তদন্ত করে তার পরিচয় সনাক্ত করা হয়।
এ ঘটনায় বুধবার (১৬ মার্চ) বিকালে আব্দুর রাজ্জাককে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এরপরই বেরিয়ে আসে রিবা হত্যার রোমহর্ষক বিবরণ।
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘রাজ্জাককে গ্রেপ্তারের পর রিবাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি। হত্যার কারণ ও পরিকল্পনার কথাও জানান রাজ্জাক।’
জিজ্ঞাসাবাদে রাজ্জাক জানান, সংবাদকর্মী হিসেবে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে দুই মাস আগে রিবা আক্তারকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর চাকরি ও স্ত্রীর মর্যাদা পেতে চাপ প্রয়োগ করে রিবা।
এদিকে আব্দুর রাজ্জাক ও তার ভাই আমিনুল ইসলামের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। রিবার চাপ থেকে মুক্তি পেতে এবং ভাই আমিনুল ইসলামকে ফাঁসাতে একটি মাস্টার প্লান করে রাজ্জাক। এই পরিকল্পনায় সে তার আরও দুই সহযোগীকে সাথে নেয়।
গত ১৪ মার্চ রাজ্জাক নিজের গ্রামের বাড়িতে রিবাকে বেড়ানোর কথা বলে ধোবাউড়া গোয়াতলা কংশ নদীর তীরে এনে পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকে অপেক্ষমান দুই সহযোগির হাতে তুলে দেয়। সেখানে তারা রিবাকে পালাক্রমে ধর্ষণের পর হত্যা করে রাজ্জাকের ভাই আমিনুল ইসলামের বাড়ির পাশের ধান ক্ষেতে লাশ ফেলে রাখে। রিবার পরনের প্যান্টের পকেটে আমিনুল ইসলামের ছেলে শহীদুল্লাহর জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপিও রেখে দেওয়া হয়। যেন পুলিশ তাকে সন্দেহ করে।
পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান আরও বলেন, ‘রিবাকে হত্যা ও নিজের ভাই আমিনুলকে ফাঁসাতে রাজ্জাক বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।’
আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তারের পর তার গাজীপুরের ভাড়া বাসা থেকে রিবা আক্তারের লাশের পরিহিত প্যান্টের পকেটে পাওয়া জন্ম নিবন্ধনের একটি ফটোকপি ও রিবা আক্তারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় ১৬ মার্চ ধোবাউড়া থানায় নিহতের বাবা দুলাল মিয়া বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এঘটনায় অন্য আসামীদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার।