মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের জন্য নিরাময় কেন্দ্র খোলা হলেও সেখানে চলতো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এমনকি রোগীকে পছন্দ হলে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালাতেন নিরাময় কেন্দ্রটির মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধন। ওই কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কাছে থেকে হাতিয়ে নেওয়া হতো লাখ লাখ টাকা। কোনো রোগী তাদের অভিভাবকদের কাছে অভিযোগ করলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হতো। র্যাব বলছে, ওই কেন্দ্রটির সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন মাদকাসক্ত!
গতকাল মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজীপুর জেলা শহরের ভুরুলিয়া কালাসিকদারের ঘাট এলাকায় ‘ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।
এ ঘটনায় ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ওই কেন্দ্র থেকে ৪২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। কেন্দ্রটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সিলগালা করে দিয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে নগরীর ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র নামক একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। যেভাবে নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনা, চিকিৎসা দেওয়া ও রোগীদের সেবা দেওয়ার কথা তা সেখানে দেওয়া হতো না। এ কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হতো বলে কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন রোগীরা।
তিনি আরও জানান, এখান থেকে শারীরিক নির্যাতনের ফুট প্রিন্ট পাওয়া গেছে। বিশেষ করে রোগীদের ঝুঁলিয়ে পেটানো এবং শারীরিক নির্যাতনের প্রমাণ হিসেবে রশি উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
একটি নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনার জন্য যে নিয়ম-কানুন আছে তার অধিকাংশই এখানে মানা হতো না। এ কেন্দ্রে নিম্নমানের খাবার সরবরাহসহ ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য কোনো চিকিৎসক ছিল না। এ কেন্দ্রে যে পরিমাণ রোগী থাকার কথা তার চেয়ে বেশি রোগী ছিল।
২০০৯ সালে কেন্দ্রটি অনুমোদনহীনভাবে শুরু করলেও পরে তার অনুমোদন নেওয়া হয়। পরে মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধন কোনো প্রকার নিয়ম-কানুন না মেনে কেন্দ্রটি পরিচালনা করতে থাকেন।
এ কেন্দ্র চিকিৎসার নামে জোরপূর্বক রোগীদের আটকে রাখা হতো। এমনও রোগী রয়েছেন যিনি ৩ বছর ধরে এ কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। রোগীরা কোনো প্রকার অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর নির্যাতন চালাতেন মালিকের পালিত কর্মচারীরা। এরকম ৫-৭ জন রোগী পাওয়া গেছে যাদের ওপর শারীরিক নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী জানান, কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীকে কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের পছন্দ হলে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হতো।
অন্য এক রোগীর মা জানান, তার ১৬ বছরের একমাত্র ছেলে ৭ মাস ধরে এ কেন্দ্রে অবস্থান করছিল। এ জন্য তার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে।
ওই কেন্দ্রে থাকা ২৮ জন রোগীকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাদের পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।