‘ভাঙা প্রেম (প্রেমঘটিত সম্পর্কের অবনতি)’ জোড়া লাগানোর প্রলোভনে দুই কিশোরীকে ধর্ষণ করেছিলেন আল-আমিন ওরফে আকিল সরদার (৬০) নামের এক ভণ্ড কবিরাজ। ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন।
এ ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় ওই ব্যক্তিকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো. জিয়াউর রহমান। সেই সঙ্গে আসামিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন, অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন বিচারক।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ রায় দেন আদালত। এর আগে ওই ঘটনায় ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাদী হয়ে মামলা করেন ভুক্তভোগী এক কিশোরীর (১৪) বাবা।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আল-আমিন ওরফে আকিল সরদার নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চান্দাই গ্রামের আব্দুল বারী ওরফে ঝোলন সরদারের ছেলে।
রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ইসমত আরা রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, মামলাটি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার। ভুক্তভোগীর বাড়ির পাশেই থাকতেন আসামি আল আমিন। তিনি কবিরাজি করতেন। মামলার অপর আসামি তছলিমা ও রঞ্জু সরদার কিশোরীকে ওই কবিরাজের কথা বলেন। তাদের কথায় বিশ্বাস করে ওই কবিরাজের কাছে যায় ভুক্তভোগী কিশোরী। সে তার প্রেমঘটিত সম্পর্কের অবনতির কথা বলে। কবিরাজ আল আমিন বিষয়টি সমাধানের কথা বলেন। এক পর্যায়ে বাড়িতে নিয়ে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন তিনি।
ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করলে হত্যার হুমকি দেন। তাতে কাজ না হলেও ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এভাবে ভয় দেখিয়ে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন আল আমিন।
ভণ্ড কবিরাজ আল আমিনের প্রতারণা ও ধর্ষণের শিকার হয় আরেক কিশোরী (১৩)। তাকেও ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে আসছিলেন। একদিন দুজনকে একসঙ্গে নিজের ঘরে ডাকেন আল আমিন। তাদের শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করার চেষ্টা করেন। এতে তারা আপত্তি জানালে আগের ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এরপর ভুক্তভোগীদের পরিবার বিষয়টি জানতে পারে। পরে ওই ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা বড়াইগ্রাম থানায় মামলা করেন।
এ মামলায় প্রথমদিকে তিনজনকে আসামি করা হলেও পুলিশ তদন্ত শেষে একজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পরে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য নাটোর বড়াইগ্রাম থানা থেকে রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
পিপি ইসমত আরা জানান, মামলায় মোট নয়জন সাক্ষ্য দেন। আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। আসামি পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।