রাজধানীর ভাটারায় বস্তাবন্দি নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মূল খুনিকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের (ডিবি) একটি দল। গ্রেফতারকৃতের নাম আবদুল জব্বার। তাকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরই মধ্যে জব্বারকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে ওই বস্তাবন্দি নারীকে হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, এক হাজার টাকা চুক্তিতে ওই যৌনকর্মী নারীকে ভাড়া করার পর সারারাত না থাকায় ক্ষিপ্ত হয়ে জব্বার তাকে খুন করে। পরে মরদেহ কার্টনভর্তি করে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। হত্যার পর নিহতের মুখ ঝলসে দেওয়া হয়েছিল।
মশিউর রহমান জানিয়েছেন, গত ১০ অক্টোবর বিকেলে ভাটারা থানার ছোলমাইদ ঢালীবাড়ি এলাকায় নারীর মরদেহ পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিক মরদেহের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় প্রযুক্তির সহায়তায় পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। এই ঘটনার পর ডিবি পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও অপরাধ সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা শুরু করে। পরবর্তীতে অপরাধীদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এরপরই গতকাল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতার জব্বারকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি জানতে পেরেছে, জব্বার গাড়ির গ্যারেজের কর্মী। আর ওই নারী একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। মাঝে মধ্যে টাকার বিনিময়ে ওই নারী পরিচিতদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতেন। গত ৮ অক্টোবর দুপুরে মোবাইলে কথা বলে জব্বারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সে বের হয়। তাকে নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্ক এবং ফুটপাতের ফুচকার দোকানে ঘোরাঘুরি করে জব্বার। সন্ধ্যার পরে সে তাকে তার ছোলমাইদ ঢালীবাড়ীর ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। এর আগেই নিজের স্ত্রী-সন্তানকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ওই নারীর সঙ্গে যৌনকর্ম শেষ করলে তিনি টাকা দাবি করেন এবং চলে যেতে চান। কিন্তু জব্বার ভিকটিমকে সারা রাতের জন্য রাখতে চায়। এটা শুনে ক্ষিপ্ত হন ওই নারী। হুমকি দেন তার (জব্বারের) সব কর্মকাণ্ড ফাঁস করে দেবেন এবং চিৎকার চেঁচামেচি করে। জব্বারের দাবি, সে নিজের আত্মসম্মান রক্ষার ভয়ে ওই নারীকে (শিপন আক্তার) ঘটনার দিন রাত ১০টার দিকে গলাটিপে হত্যা করে।
তিনি আরও বলেন, জব্বার ইয়াবা আসক্ত ছিল। খুনের পর ভিকটিমের মোবাইল একহাজার টাকায় বিক্রি করে সে তিনটি ইয়াবা কেনে। এসময় তার বন্ধু হীরাকে বাসায় আনে। তারা দু’জন একসঙ্গে ইয়াবা সেবন করে এবং মরদেহ গুমের পরিকল্পনা করে। এসময় মরদেহটি প্রথমে একটি কার্টনের মধ্যে রেখে পরবর্তীতে ভাঙারির দোকান থেকে আনা বড় বস্তায় ভরে। পরে রাত তিনটার দিকে জব্বার ও হীরা মরদেহ মাথায় নিয়ে তিনতলা থেকে নামায়। পরবর্তীতে একশ টাকায় রিকশা ভাড়া করে মরদেহটি রাস্তায় ফেলে দেয়।