গৃহবধূ ডলি বেগমের সঙ্গে তার স্বামী মাইনুল ইসলাম ওরফে কাজলের বেশ কিছুদিন ধরে ঝগড়াঝাটি চলছিল। সেই ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে তার স্বামী হঠাৎ করেই পেট্রল ঢেলে দেন ডলির গায়ে। পেট্রল ঢেলেই লাইটার দিয়ে আগুনও ধরিয়ে দেন। পেট্রলের মধ্যে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। অবশেষে আশপাশের লোকজন এসে আগুন নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ডলি বেগম চলে গেছেন পরপারে।
গত ১৩ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার আনোয়ার পুর গ্রামে ঘটেছে মর্মান্তিক এই ঘটনা। এ ঘটনার পর তার স্বামী আত্মগোপনে চলে যায়। ঘটনাটি জানতে পেরে সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে। অবশেষে রবিবার রাত ১টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় সিআইডি। গ্রেপ্তারের পর জানা গেছে তার নামে থানায় ১৯টি মামলা রয়েছে।
সোমবার দুপুরে মালিবাগের সিআইডি সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান সিআইডির সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১৩ মে সকাল ৬টার দিকে অভিযুক্ত মাইনুল ইসলাম ওরফে কাজল ভুইয়া (৪৭) নিজ বাড়িতে তার স্ত্রী ডলি বেগমের (৬০) গায়ে পেট্রল ঢেলে লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
তখন ডলির চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গত ২০ মে ডলি বেগমের ভাই মো. বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে আখাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনাটি জানার পর সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তধরের নেতৃত্বে একটি চৌকস দল সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে কাজলের অবস্থান শনাক্ত করেন। অবশেষে গত রবিবার রাত ১টার দিকে জাফলং এলাকা থেকে মইনুল ইসলাম ওরফে কাজলকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কাজল জানান, তার স্ত্রীর সঙ্গে তার বনিবনা হচ্ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে বিরোধ লেগে ছিল। ১৩ মে সকালে তাদের মধ্যে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে কাজল তার ব্যক্তিগত মোটর সাইকেল থেকে খালি পানির বোতলে পেট্রল নিয়ে ডলির গায়ে ঢেলে দিয়ে লাইটার জ্বালিয়ে দেন। আগুন দেওয়ার সময় তার নিজের বাম হাতেও আগুন লেগে পুড়ে যায়।
সিআইডি জানতে পারে কাজল একজন পেশাদার মাদক কারবারি। তার বিরুদ্ধে ১৩ টি মাদক মামলাসহ ১৯ টি মামলা আছে। আখাউড়া থানায় তার নামে তিনটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের অপেক্ষায় মুলতবি রয়েছে। তার কাছ থেকে একটি টয়োটা সেলুন গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।