বাগেরহাটের মোংলায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহত্যা নিয়ে নতুন অভিযোগ তুলেছেন তার বাবা। পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রথমে প্রচার করা হলেও এখন তা ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে।
সুন্দরবনের করমজলে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের পর সেই ভিডিও দিয়ে ধারাবাহিকভাবে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগ উঠেছে। একাধিকবার ধর্ষণসহ মানসিক নির্যাতনে ভেঙে পড়ে সে আত্মহত্যা করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ওই ঘটনার প্রায় ৪ মাস পর গত ৭ এপ্রিল ভুক্তভোগীর বাবা আলী হোসেন বাচ্চু বাদী হয়ে তিনজনের নামে বাগেরহাট আদালতে ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে এজাহার দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে গত ২১ এপ্রিল মোংলা থানা পুলিশ এজাহারটিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনা সংক্রান্ত ধারায় এফআইআর (মামলা) রেকর্ড করেন।
এর এক দিন পর গত ২২ এপ্রিল মামলার প্রধান আসামি মো. আসহাবুল ইয়ামিনকে (২৪) বিশেষ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধবী কলোনী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলা ও ভুক্তভোগীর পারিবারিক সূত্র জানায়, মোংলা শহরের সামসুর রহমান রোড়ের বাসিন্দা অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রী পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলায় বেশ পারদর্শী ছিল। ক্রিকেট খেলার সুবাদে মোংলার বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত ছিল তার। এরই সূত্র ধরে মো. আসহাবুল ইয়ামিন ও তার কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে ভুক্তভোগীর পরিচয় হয়। একপর্যায়েতাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে।
কিছু দিন পর আসহাবুল ও তার সহযোগীরা ওই কিশোরীকে ফুঁসলিয়ে ট্রলারে করে সুন্দরবনের করমজল পিকনিক স্পষ্টে বেড়াতে নিয়ে যায়। সেখানে নেশা জাতীয় কিছু খাইয়ে আসহাবুল তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় মেয়েটির নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করে আসহাবুল ও তার সহযোগীরা।
এরপর থেকেই তার ওপর শুরু হয় নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। ধর্ষণের ভিডিও ফেসবুক ও অভিভাবকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাকে ধারাবাহিকভাবে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। এর সুবাধে আসহাবুল তার সহযোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণসহ নানাভাবে নির্যাতন করে।
গত ১৪ ডিসেম্বর কিশোরীকে এক সহযোগীর মোটরসাইকেলে করে আসহাবুল কাইনমারী এলাকার একটি কফিশপে ডেকে নেয়। সেখানে মেয়েটি বিয়ের প্রস্তাব দিলে নানান ধরনের তিরস্কার, লজ্জাজনক ও অপমানমূলক কথাবার্তা বলে তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে আসহাবুল।
এতে মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এর পরের দিন ১৫ ডিসেম্বর রাতে বাড়ির নিজ কক্ষের গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে ভুক্তভোগী ওই কিশোরী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মানিক চন্দ্র গাইন জানান, ইতিমধ্যে মামলার তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। ঘটনার অন্যতম হোতা আসহাবুল ইয়ামীনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।