শরীয়তপুরের কীর্তিনাশা নদীতে ডাকাতির চেষ্টার ঘটনায় শনিবার আট ডাকাতকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে আহত ডাকাত সদস্যদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে দুজনের মৃত্যু হয়। আর উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনজনকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ওই দিন সন্ধ্যায় আরো একজনের মৃত্যু হয়।
এদিকে আজ রবিবার মাদারীপুরের কীর্তিনাশা নদীতে ভেসে উঠেছে গণপিটুনির পর নিখোঁজ আরো এক ডাকাতের লাশ।এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল চারজন।
রবিবার (২ মার্চ) বিকেলে মাদারীপুর সদর উপজেলার বিদ্যাবাগিস এলাকার কীর্তিনাশা নদী থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এখনো তার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে শনিবার (১ মার্চ) সকালে শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাসার ইউনিয়নের আড়িগাঁও এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।আটককৃতরা আন্ত জেলা ডাকাতচক্রের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে ডাকাতি, হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পালং মডেল থানার পুলিশ।
আটককৃতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। তারা হলেন মুন্সীগঞ্জের মহেশপুর এলাকার সানাউল্লাহ গাজীর ছেলে রাকিব গাজী (৩৮), একই জেলার কালিরচর এলাকার বাচ্চুর ছেলে রিপন (৪০), শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কুণ্ডেরচর এলাকার মোহাম্মদ দেওয়ানের ছেলে আনোয়ার দেওয়ান (৫০) ও মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকার হারুন তালুকদারের ছেলে সজিব তালুকদার (৩০)।
এদের মধ্যে রিপন ও সজিব তালুকদার গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। আর পরে ঢামেকে মৃত্যুবরণ করা আরেক ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি।
পরে ডাকাতরা স্পিডবোট ফেলে পালানোর সময় সাতজনকে আটক করে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের মধ্যে দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। অন্যদিকে ডাকাতদের ছোড়া গুলিতে ৫ জন আহত হয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মুনতাসির খান বলেন, ডাকাতদের গুলিতে আহত চারজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। বাকি তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ৮ জন আহত ডাকাতের মধ্যে দুজন মারা গেছে। বাকি ৬ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে গণপিটুনিতে আহত হয়ে যাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মারা যান তিনি। তবে ওই ব্যক্তির নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।
সত্যতা নিশ্চিত করে শরীয়তপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান বলেন, গণপিটুনির শিকার ৫ জনকে চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।
জেলার পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, ডাকাতির চেষ্টার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন মারা গেছে। ডাকাতির ঘটনায় একটি কাটা রাইফেল ও শটগানসহ দুটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।