জ্বর ছাড়াও শরীর, কোমর ও মাথা ব্যথা ছিল। থেমে থেমে খিঁচুনি হতো। এ অবস্থায় ‘জিন’-এর আছর পড়েছে ভেবে কবিরাজ এনে দেওয়া হয় ঝাড়-ফুঁক। এ ছাড়াও নাকের মধ্যে দেওয়া হয় আগরবাতি ও কাপড় পোড়া ধোঁয়া।
তামান্নার বাবা রশিদ মিয়া জানান, বেশ কিছু দিন ধরে তার মেয়ে শরীর দুর্বল ছাড়াও কোমর, মাথা ও শরীর ব্যথার কথা বলে আসছিল। এক পর্যায়ে উপজেলা সদরে নিয়ে চিকিৎসক দেখিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়ানো হয়। কিছুদিন ভালো থাকার পর ফের অসুস্থ হয়ে পড়ে তামান্না। এর মধ্যে থেমে থেমে খিঁচুনি হতো। পরে এক নারী কবিরাজের কাছে নিয়ে গেলে তিনি বলেন, ‘তামান্নাকে জিনে ধরেছে। ভালো করতে অনেক টাকা লাগবে। ’
রশিদ মিয়া আরো জানান, প্রথম দিন তামান্নাকে নিয়ে কবিরাজের বাড়িতে প্রায় চার ঘণ্টা ঝাড়-ফুঁক দেওয়ানো হয়। এতে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। পরে সোমবার রাতে দুই সহযোগী নিয়ে বাড়িতে এসে একটি কক্ষ বন্ধ করে চিকিৎসা চালান ওই কবিরাজ।
সেখানে তার হাত-পা বেঁধে নাক দিয়ে আগরবাতি ও কাপড় পোড়া ধোঁয়া দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন আব্দুর রশিদ। ভোররাতে তামান্না জ্ঞান হারিয়ে ফেললে জিন চলে যাচ্ছে বলে বাড়ি ত্যাগ করেন কবিরাজ ও তার সহযোগীরা। দুপুর পর্যন্ত জ্ঞান না ফেরায় তামান্নাকে ঈশ্বরগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসক। সেখানে নেওয়ার সময় হাসপাতাল ফটকেই মারা যায় তামান্না।
অভিযুক্ত কবিরাজ নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার আমেনা বেগম (৪৫)। তিনি বাঁশহাটি গ্রামে মেয়েজামাই মো. রমজানের বাড়িতে এসে কবিরাজি করতেন। তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন জালাল ও কাশেম।
কবিরাজের মেয়ে আকলিমা দাবি করেন, তার মায়ের চিকিৎসায় তামান্না ভালো হয়েছিল। পরে অন্য চিকিৎসায় মারা যায়। এতে তার মায়ের কোনো দোষ নেই।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোস্তাছিনুর রহমান জানান, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।