কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলনে প্রবেশ করা নিয়ে দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছেন প্রতক্ষ্যদর্শীরা। এ ঘটনায় উভয় গ্রুপের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আজ শনিবার বেলা ১২ টার দিকে নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। এদিন সকাল ১১ টায় কুমিল্লা টাউন হল মাঠে ওই সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন কাদের।
এদিকে, আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় আহত হয়েছেন দৈনিক প্রথম আলোর স্থানীয় চিত্র সাংবাদিক এম সাদেক। তার গলায় ছররা গুলি লেগেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এম সাদেক জানান, দলটির দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের গোলাগুলি চলাকালে ছররা গুলিতে আহত হন তিনি।
দলের নেতাকর্মীরা জানান, কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খানের সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক বিরোধ চলেছে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের। আফজল খানের মৃত্যুর পর তার মেয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমা এখন ওই পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শনিবারের সম্মেলনে প্রয়াত আফজল খানের অনুসারীদের উপেক্ষিত করার অভিযোগ করেছেন তারা। তবে বাহারের অনুসারীরা তা নাকচ করে দিয়েছেন। এ অবস্থায় আফজল খানের অনুসারীরা দাওয়াত না পেলেও সম্মেলনে যোগদান করার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলের নেতাকর্মীরা জানায়, সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য চলাকালে আঞ্জুম সুলতানা সীমার নেতৃত্বে আফজল অনুসারীরা টাউন হল মাঠে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় এমপি বাহারের অনুসারীরা তাদেরকে বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুর হয়। এ সময় অন্তত দশটি ককটেল বিস্ফোরণ ও বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। পরে পুলিশের সদস্যরা দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আহমেদ সঞ্জুর মোরশেদ বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সদস্যরা মাঠে রয়েছেন। এ ঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকে কোনো গুলি করা হয়নি। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
এমপি সীমার সঙ্গে সম্মেলনে প্রবেশেন সময় বাধাপ্রাপ্ত হন মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক নুর-উর-রহমান মাহমুদ তানিম, মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আনিসুর রহমান মিঠু, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক কবিরুল ইসলাম শিকদার, প্রয়াত আফজল খানেন ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা ও কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদ পারভেজ খান ইমরানসহ বেশ কয়েকজন নেতা।
মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক নুর-উর-রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, ৫ নভেম্বরের সম্মেলনের বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। সম্মেলনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি সভায় আমাদের কাউকে রাখা হয়নি। এরপরও আমরা সম্মেলনে গিয়েছি। টাউন হল গেটে তারা (বাহার গ্রুপ) আমাদেরকে প্রবেশ করতে না দিয়ে গেট বন্ধ করে দেয়। আমরা চাইলে গেট ভেঙে প্রবেশ করতে পারতাম। পরে কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদেরকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন বিশৃঙ্খলা না করতে। কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা ফিরে আসছিলাম। তখন পেছন থেকে তারা আমাদের কর্মীদের উপর আক্রমণ করে।
তানিম আরো বলেন, পরে আমাদের কর্মীরা তাদের প্রতিহত করলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তাদের গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণে আমাদের কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাহারের অনুসারী সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, আমরা এখন সম্মেলনস্থলে। আমাদের লোকজন কোনো গুলি ছোড়া বা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়নি। ঘটনার বিস্তারিত জেনে পরবর্তীতে জানানো হবে।