পাকিস্তানকে এ জন্যেই বোধহয় বলা হয় আনপ্রেডিকটেবল দল। বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের কাছে এমন বেধরক মারই খাবে ভেবেছিল পাকিস্তান! আর সেই পাকিস্তান ৩৭ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকা অবস্থায় কে ভেবেছিল তারা শ্রীলঙ্কার দেওয়া ৩৪৫ রান অনায়াসে হেসেখেলে জিতে যাবে!
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ না হারার রেকর্ডটা অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হলো বাবর আজমের দল। আবদুল্লাহ শফিক ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের জোড়া সেঞ্চুরিতে তারা শ্রীলঙ্কার দেওয়া ৩৪৫ রানের লক্ষ্য ৬ উইকেট ও ১০ বল হাতে রেখেই টপকে যায়। বিশ্বকাপে এটিই পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড।
লঙ্কানদের দেওয়া ৩৪৫ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতে ধাক্কা খায় পাকিস্তান। ওপেনিংয়ে ফখর জামানের বদলি এদিন খেলতে নামেন আবদুল্লাহ শফিক। কিন্তু অন্য প্রান্তের নিয়মি ওপেনার ইমাম উল হক ছিলেন এদিন পুরোপুরি ব্যর্থ। ম্যাচের চতুর্থ ওভারেই মাত্র ১২ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় তাকে মাধুশাঙ্কার বলে আউট হয়।
দলের অধিনায়কের ওপর ছিল অনেক বড় প্রত্যাশা। সেটি মেটাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন বাবর আজম। অষ্টম ওভারে ১৫ বলে ১০ রান করে তিনিও মাধুশাঙ্কার শিকার হন। এরপরেই দলের হাল ধরেন আবদুল্লাহ শফিক ও উইকেটকিপার মোহাম্মদ রিজওয়ান।
শুরুর ধাক্কা সামলে দুইজনই আস্তে আস্তে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন জয়ের বন্দরে। ২০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১১০ রান করে তোলে পাকিস্তান প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দিয়ে। এরপরেই দুই ব্যাটসম্যান মারমুখী ভূমিকায় আবির্ভূত হন। এরপরের দশ ওভারে এ দুই ব্যাটার মিলে করেন ৭২ রান।
৩২তম ওভারে মাধুশাঙ্কার বলে চার মেরে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটি পেয়ে যান আবদুল্লাহ শফিক। ১০৩ বলে ১০ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৩ রান করে পাথিরানার বলে হেমন্তর দুর্দান্ত এক ক্যাচে আউট হন শফিক। ভেঙে যায় ১৭৬ রানের দুর্দান্ত জুটিটি।
শফিকের আউটের পর সৌদ শাকিলকে নিয়ে দলকে জয়ের দিকে এগোতে থাকেন রিজওয়ান। শফিকের পর তিনিও তুলে নেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ও ওয়ানডেতে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরি। ৩০ বলে ৩১ রান করে থিকশানার বলে আউট হন সৌদ শাকিল।
তবে ইফতিখারকে সঙ্গে নিয়ে দলকে ঠিকই জয়ের বন্দরে পৌঁছান রিজওয়ান। পাকিস্তান পায় ৬ উইকেটের স্বস্তির জয়। রিজওয়ান ১২১ বলে ১৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন। শ্রীলঙ্কার হয়ে মাধুশাঙ্কা ২টি, পাথিরানা ও থিকশানা একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দুই সেঞ্চুরি আর এক হাফ সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ৯ উইকেটে ৩৪৪ রানের বড় সংগ্রহ পেয়েছে লঙ্কানরা। অর্থাৎ জয়ের জন্য পাকিস্তানকে করতে হবে ৩৪৫ রান।
হায়দরবাদের রাজিব গান্ধি স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানের বোলারদের তুলোধুনো করেছে শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা।
ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়ে দলের হয়ে দুটি সেঞ্চুরি করেছেন যথাক্রমে কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। ৭৭ বলে ১২২ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন মেন্ডিস। ৮৯ বলে ১০৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন সাদিরা সামারাবিক্রমা।
৬৫ বলে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন মেন্ডিস। শেষ পর্যন্ত ৭৭ বলে ১৪ বাউন্ডারি এবং ৬টি ছক্কা মেরে ১২২ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। অন্যদিকে, দলের হয়ে ৮২ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন সামারাবিক্রমা। ৮৯ বলে ১০৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন এ মিডল অর্ডার। এ ব্যাটারের ওপর ভর করে পাকিস্তানের সামনে রানের পাহাড় গড়ে লঙ্কানরা।
টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তটা যেন আশির্বাদ হয়ে আসে লঙ্কানদের জন্য। যদিও শুরুতে ধাক্কা খেয়েছিল দাসুন শানাকার দল। কুশল পেরেরার উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে নেন পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। এরপর ঝড় তোলেন সাদিরা সামারাবিক্রমা।
দ্বিতীয় উইকেটে ৯৫ বলে ১০৫ রানের জুটি গড়েন পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। ৬১ বলে ৫১ রান করে শাদাব খানের বলে আব্দুল্লাহ শফিকের হাতে তালুবদ্ধ হন নিশাঙ্কা। তবে ওপেনার নিশাঙ্কার উইকেটের প্রভাব দেখা যায়নি মেন্ডিসের ব্যাটে।
সাদিরা সামারাবিক্রমার সঙ্গে আরেকটি বড় জুটি গড়ে তোলেন তিনি। ১১১ রানের এই জুটিতে বড় সংগ্রহের পথে হাঁটে শ্রীলঙ্কা। পাকিস্তানি বোলারদের তুলোধুনো করে সেঞ্চুরি তুলে নেন কুশল মেন্ডিস। ইনিংসের ২৯ তম ওভারে হাসান আলির বলে ইমাম-উল হকের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন এ মারকুটে ব্যাটার।
ব্যাট হাতে দলের জন্য কিছুই করতে পারেননি চারিথ আসালঙ্কা। এক রান করে হাসান আলির বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।
ধনঞ্জয়া ডি সিলভা খেলেছেন ২৫ রানের ইনিংস। মোহাম্মদ নওয়াজের বলে শাহিন আফ্রিদির ক্যাচ হন তিনি (৩৪ বলে ২৫)। অধিনায়ক হয়ে দলে তেমন অবদান রাখতে পারেননি দাসুন শানাকা। শাহিন আফ্রিদির শিকার হয়ে মাত্র ১২ রানেই শেষ হয়ে যায় তার ইনিংস।
দুনিথ ভেল্লালাগে ৮ বলে ১০ রান সংগ্রহ করে সাজঘরে ফেরেন। শেষপর্যন্ত ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৪৪ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা।