আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে জেতা ম্যাচে শেষ উইকেট জুটির রেকর্ড ৬৪ রানের। ১৯৭৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ দুই ব্যাটসম্যান অ্যান্ডি রবার্টস এবং মুরার দখলে আছে রেকর্ডটি। ভারতের বিপক্ষে আজ শেষ উইকেটে বাংলাদেশ ম্যাচ জিততে তুলেছে ৫১ রান। এটা অবশ্য শীর্ষ তিনেও নেই। তবে বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এটাই রেকর্ড।
ওয়ানডেতে এর আগে শেষ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল ৩৫ রানের। সেটিও জেতা ম্যাচে। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়েকে হারানোর পথে এই রান করেছিলেন নাঈম ইসলাম এবং নাজমুল হোসেন। সেই রান টপকে বাংলাদেশের জন্য রেকর্ড রানের জুটি গড়ে এবার ভারতের বিপক্ষে ১ উইকেটের জয় তুলে নিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ এবং মুস্তাফিজুর রহমান।
যেখানে অবশ্য সম্পূর্ণ কৃতিত্ব মিরাজের। এই ব্যাটসম্যানের জাদুকরি ব্যাটিংয়ে অদ্ভুত, সুন্দর জয় তুলে নিলো টাইগাররা। ভারতের বিপক্ষে ৭ বছর পর ৫ ম্যাচ শেষে ওয়ানডেতে ৬ষ্ঠ জয় তুলে নিলো টাইগাররা।
ভারতের বিপক্ষে শেষ উইকেটে বাংলাদেশের তোলা ৫১ রানের মধ্যে মুস্তাফিজের ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১০ রান। অন্যপ্রান্তে মিরাজ চার ও ছয়ের বন্যা বইয়ে তুলেছেন ৩৭ রান। এ ছাড়াও ভারতীয় বোলাররা নো বল করে বাংলাদেশের জয়ের পথে কিছুটা সাহস জুগিয়েছেন বটে।
মিরপুরের শের-ই বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এদিন টসে জিতে ভারতকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় তামিমের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব দেওয়া লিটন দাস। সাকিব আল হাসান ও এবাদত হোসেনের বোলিং তোপে ভারতীয়রা ম্যাচে কখনোই আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। দলটির পক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল মাত্র ৬০ রানের।
এ ছাড়াও ব্যাট হাতে একমাত্র লোকেশ রাহুল ব্যতীত অন্য কেউই রানের ফোয়ারা ছোটাতে পারেননি। রাহুল করেছিলেন সর্বোচ্চ ৭৩ রান। ভারতের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল মাত্র ২৭। সেটি এসেছে অধিনায়ক রোহিত শর্মার ব্যাট থেকে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের সাকিব ও এবাদত বল হাতে এদিন যেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ছারখার করার মিশনেই ছিলেন। সাকিব তো প্রায় ক্যারিয়ারসেরা বোলিং ফিগার পেয়েই গেছিলেন। ৭ ওভারের মধ্যে ২১ রানের ভেতরে তুলে নেন ৫ উইকেট। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে শেষ ৩ ওভারে আর উইকেট নিতে পারেননি। অন্যদিকে রান দিয়ে ফেলেন ১৫টি। ফলে শেষ পর্যন্ত ৩৬ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় সাকিবকে।
এই ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো ফাইফার পেলেন সাকিব। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে যে সংখ্যাটা এখন ২৪-এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সাকিবের ৫ উইকেটের পাশে ভালোই টেক্কা দিয়েছেন এবাদত। তুলে নিয়েছেন ৪ উইকেট। যদিও খরচ করেছেন ৪৭ রান। তবে এটিই এবাদতের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুর দিকে নড়বড়ে ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিংও। ২৬ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। এরমধ্যে শান্ত তো ইনিংসের প্রথম বলেই ফিরে যান রানের খাতা না খুলে। এছাড়াও তিনে নেমে আনামুল হক বিজয় ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি।
তবে তৃতীয় উইকেট জুটিতে লিটন ও সাকিব ৪৮ রানের জুটি গড়ে খেলায় ফেরায় বাংলাদেশকে। লিটন অবশ্য ৪১ রান করে ফিরলে ভাঙে জুটিটি। এরপর সাকিব দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন।
তবে ২৯ রান করার পর কোহলির এক জাদুকরি ক্যাচে পরিণত হন এই ব্যাটসম্যানও। পঞ্চম উইকেট জুটিতে মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ দৃষ্টিকটু ব্যাটিং উপহার দিতে থাকেন। একের পর এক ডটে নিজেদের ওপরই নিজেরাই চাপ বাড়ান।
সেই চাপের খেসারতও দেন এই দুই ব্যাটসম্যান। পরপর দুই বলে ফিরে বাংলাদেশকে ভয়ানক চাপে ফেলে দেন। বাকিরাও সেই চাপ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এক পর্যায়ে ভুতুড়ে ব্যাটিং করে ৮ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে খেলা থেকে প্রায় ছিটকে যায় বাংলাদেশ।
দলের এমন বেহাল অবস্থা দেখে হতাশ দর্শকরাও মাঠ ছাড়তে শুরু করেন। তবে ২২ গজে যে তখনও জাদুর অবশিষ্ঠ ছিল। যে জাদুর নায়ক ছিলেন মিরাজ।
দলীয় ১৩৬ রানের মধ্যে ৯ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন হারের অপেক্ষা গুণছিল, তখনই পালটা আক্রমণ করতে শুরু করেন মিরাজ। যার শুরু কুলদীপ সেনের এক ওভারে দুই ছয় মারার মধ্য দিয়ে। এরপর দীপক চাহারকেও দুই চার মেরে দলকে বিশ্বাস দিতে শুরু করেন মিরাজ।
অন্যপ্রান্তে থাকা মুস্তাফিজও ব্যাট হাতে সহায়তা দিতে থাকেন মিরাজকে। শেষপর্যন্ত দুইজনে ৫১ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে ভারতকে হারিয়েই মাঠ ছাড়েন। এই জয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে আগামী ৭ ডিসেম্বর একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে।