বিয়ে করে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে অন্যতম ‘ব্যাড বয়’ খ্যাত নাসির হোসেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিনে নাসির গাঁটছড়া বাঁধেন নববধূ তামিমা সুলতানার সাথে। শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে আলোচিত নাসির-তামিমা জুটির বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
কিন্তু এই বিয়ে নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন সমস্যা। নাসিরের স্ত্রী তামিমা তাম্মির এর আগে বিয়ে হয়েছিল। সেই স্বামীকে ডিভোর্স না দিয়েই তিনি নাসিরকে বিয়ে করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তামিমার সেই সংসারে ৯ বছরের একটি মেয়েও আছে।
বিষয়টি নিয়ে তামিমার প্রথম স্বামী রাকিব হাসানের সঙ্গে কথা বলেছেন ইউটিউবার রাহিদ রনি। সাক্ষাৎকারে রাকিব হাসান জানিয়েছেন তাদের বিয়ে এবং সংসারের গল্প__
রাকিব বলেন, আমাকে বিভিন্ন জন ফোন করে জিজ্ঞাসা করছিল ভাই ভাবির সঙ্গে আপনার কী হয়েছে? আমি বলি, আমি তো ডিভোর্সই দেই নাই, আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি বিয়ে শেষ!
একই ভিডিওতে রাকিব জানান, আমার মেয়ে আমার ভাইয়ের মোবাইলে ছবি দেখে বলে, দেখো, চাচ্চু আম্মু! এরপর আমার মেয়ে রাতে ফোন দিয়ে বলেছে, বাবা আম্মু কী করেছে তুমি দেখছো? তুমি আম্মুকে বকা দিবে না? আমি বলছি তোমার আম্মু তো তুমি বকা দিয়ো। আমার মেয়ে কান্না করেছে। মেয়ে এখন রাকিবের মায়ের সঙ্গে আছে বলে জানান। রাকিব এও জানান, তামিমার বাসায় তার মেয়েকে রাখা সম্ভব নয়। কারণ সেটা ‘সেফ’ না।
সাক্ষাৎকারের পরের অংশে কীভাবে রাকিব তামিমাকে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ের পর লেখাপড়া করিয়েছেন তা বলেন।
এর আগে শনিবার (২০ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া তামিমার সাবেক স্বামী রাকিবের একটি জিডির কপি পাওয়া যায়। তিনি বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় এ জিডিটি করেন বলে নিশ্চিত করেছেন উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও (ওসি) শাহ মো. আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস।
জিডি সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে তামিমা তাম্মিকে বিয়ে করেন রাকিব। দাম্পত্য জীবনে তাদের একটি মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যেই তামিমা অন্য এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায়। ছয় মাস সংসার করার পর ফিরে আসে। পরে রাকিবের সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে পার পায়। কিন্তু গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নতুন করে নাসিরের সঙ্গে ছবি ভাইরাল হলে রাকিব জানতে পারেন, তামিমা বিয়ে করেছেন।
এর আগে শনিবার নাসিরের সঙ্গে তামিমার সাবেক স্বামী রাকিবের একটি ফোনালাপের অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ৪ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের এই কথোপকথনে নাসিরকে তামিমার প্রথম স্বামী জিজ্ঞাসা করছেন, নাসির কেন না জেনেই প্রথম স্বামী বর্তমান থাকা সত্ত্বেও তামিমাকে বিয়ে করেছেন।
পাঠকদের জন্য নাসির হোসেন ও রাকিবের কথোপকথনটি হুবহু তুলে ধরা হলো—
নাসির: হ্যালো, আমি নাসির হোসেন বলছিলাম।
রাকিব: কোথা থেকে?
নাসির: আমি ক্রিকেটার নাসির হোসেন বলছিলাম।
রাকিব: ওহ…
নাসির: এটা রাকিবের নাম্বর না?
রাকিব: হ্যাঁ, আমি রাকিব বলছিলাম।
নাসির: আপনি সেই রাকিব কিনা….
রাকিব: সেই রাকিব মানে?
নাসির: আমি আপনাকেই চাচ্ছিলাম, ভালো আছেন আপনি? ভাইয়া, আমি তামিমার ব্যাপারে কিছু কথা বলার জন্য আপনাকে ফোন দিয়েছি।
রাকিব: হ্যাঁ, বলুন…
নাসির: আপনি যা করলেন… আপনি নাকি জিডি করছেন?
রাকিব: হ্যাঁ, করছি। বলেন
নাসির: এগুলা করে কী পাচ্ছেন আপনি, আমাকে একটু বলবেন?
রাকিব: কিছু পাচ্ছি না। আচ্ছা আপনি কী তামিমার সম্পর্কে সবকিছু জানেন?
নাসির: আমি সবকিছুই জানি ভাইয়া।
রাকিব: কী কী জানেন আপনি?
নাসির: ওর বাচ্চা আছে, বিয়ে হয়েছে, বয়ফ্রেন্ড ছিল… আমি ওর সবকিছুই জানি। আমি জেনেশুনেই বিয়ে করেছি। এখন আপনি কি চান না তামিমা হ্যাপি থাকুক?
রাকিব: হ্যাঁ, তামিমা তো হ্যাপি থাকতেছে। আমি তো আর ডিসটার্ব করছি না। জিডি করেছি কারণ তামিমা তো আমাকে কোনো পেপার দেয়নি। তামিমার সঙ্গে আপনার যখন কথা হয়, তখন আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম যে তামিমা, নাসির কে? সে বলল, আমার ফ্রেন্ড, বার্থডেতে আসছিল…। জাস্ট ফ্রেন্ড…
নাসির: ভাইয়া শোনেন…
রাকিব: আপনি আমার কথা শোনেন। আপনি সবই জানেন (বিয়ে, বাচ্চা), জেনেশুনে আরেকজনের বউকে বিয়ে করে ফেললেন! সে যদি আমাকে বলত, রাকিব তোমার সঙ্গে থাকতে আমার ভালো লাগে না, চলে যাব। ওকে, চলে যাবে। আমার কোনো সমস্যা ছিল না। তো আসত, আমার সঙ্গে বসত, আমাকে কাগজ দিত, সম্পর্ক ছিন্ন করত। ভবিষ্যতে আমিও তো বিয়ে করব, তাই না? সো, আমারও তো কাগজের দরকার আছে। সে এসব কিছু না করেই আপনাকে বিয়ে করল।
নাসির: সে কিন্তু চলে গেছে, সেটা দেখেই বিয়ে করছি আমি। ঠিক আছে?
রাকিব: ভাই দেখেন, আপনি কী দেখে বিয়ে করছেন, আমি জানি না। আমি আট বছর আগে বিয়ে করছি। আমার মেয়ের বয়স ছয় বছর। আমি তার জন্য কী করছি না করছি, আপনি কিছুই জানেন না। আপনি বললেন যে আমি চাই কি না যে তামিমা সুখে থাক। তো আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি, আপনি চান না যে আমি আর তামিমা সুখে থাকি? আপনি সেটা কীভাবে করলেন? একজনের মেয়ে আছে, সংসার আছে…।
নাসির: আপনার সঙ্গে তো তার সংসার নাই, বুঝছেন না? ভাই, আমি এত ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না। আমি শুধু এতটুকু জানতে চাই যে আপনি কি চান না যে তামিমা সুখে থাক? যদি চান, তাহলে এটা নিয়ে আর কিছুই কইরেন না। যদি তামিমা আপনার সঙ্গে হ্যাপি থাকত, তাহলে আপনার কাছেই থাকত।
রাকিব: আচ্ছা, আপনি আমাকে ফোন দিয়েছেন কেন? আমি তো আপনাকে চিনি না। ফোন তো আমাকে দেবে তামিমা।
নাসির: তামিমা কেন ফোন দেবে?
রাকিব: অবশ্যই তামিমা ফোন দেবে। তামিমার সমস্যা, সে আমাকে ফোন দেবে। নাকি এখন আপনার সমস্যা? আপনি কি জানেন, আপনি যে বাসায় থাকতেছেন সেই বাসার ফার্নিচারগুলোও আমার?
নাসির: তাই! আমি জানি সবকিছুই জানি।
রাকিব: আপনাকে যদি আপনার স্ত্রী বলে… সে করোনার আগে যখন গেল, গিয়ে আটকা পড়ল, তার আগেও তো আমার সঙ্গে দেখা করে আমার সঙ্গে থেকেছে।
নাসির: আচ্ছা… ভাই আমার কথাটা আপনি শোনেন।
রাকিব: আপনার সে কিভাবে গার্লফ্রেন্ড হলো, বলেন তো? ভাই আমি এখন আসরের নামাজে যাব। আমি এখন আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারতেছি না বলে দুঃখিত।