সেঞ্চুরির পর তামিম ইকবাল ছুটছিলেন ৫ হাজার রানের মাইলফলকের পথে। সাদা পোশাকে দেশের হয়ে প্রথম ৫ হাজার রানের হাতছানি ছিল বাঁহাতি ওপেনারের। কিন্তু ১৩৩ রানে ক্র্যাম্প করায় তামিম যখন ড্রেসিংরুমে ফিরে যাচ্ছিলেন তখন রেকর্ড থেকে মাত্র ১৯ রান দূরে ছিলেন।
সঙ্গী মুশফিকুর রহিম তখন ১৪ রানে ব্যাটিংয়ে। তামিমের মতো একই লড়াইয়ে ছিলেন মুশফিক। এই টেস্টের আগে তামিমের ১৫২ ও মুশফিকের ৬৮ রান লাগত ৫ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁতে। তামিম খুব কাছে গিয়েও শারীরিক জটিলতায় পারেননি। তবে মুশফিক পথ ভোলেননি।
আগের দিন ৫৩ রান তুলে কাজ এগিয়ে রেখেছিলেন। বুধবার দ্বিতীয় ঘণ্টায় তার ব্যাটে রাঙা হয় নতুন ইতিহাস। যা এর আগে করতে পারেননি কেউ। দ্বিতীয় ঘণ্টার দ্বিতীয় ওভার। পেসার আশিথা ফার্নান্দোর শর্ট বল ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার গ্লাভসে লেগে বল যায় ডিপ ফাইন লেগে। ৪৯৯৯ থেকে তার রান পৌঁছে যায় ৫০০১ রানে।
ক্যারিয়ারের বেশ বড় অর্জনে পা রাখলেও তার উদযাপন ছিল সাদামাটা। শুরুতে ব্যাট উঠিয়ে ভক্তদের করতালির জবাব দেন। সতীর্থ লিটন এগিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেন। এরপর হেলমেট খুলে ড্রেসিংরুমে ব্যাট তাক করেন। ড্রেসিংরুমের থেকে বেরিয়ে সতীর্থ, কোচিং স্টাফরা তখন তাকে অভিনন্দন জানান। সেখানে ছিলেন তামিমও। ওয়ানডে অধিনায়ক সতীর্থকে গিয়ারআপ করতে দেখা যায়।
টেস্ট ক্রিকেটে ৫ হাজার রান যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই আরাধ্য, প্রতীক্ষিত। স্বপ্নডানায় চড়ে মুশফিক নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ইতিহাসের অক্ষয় কালিতে লেখা হলো তার নাম। বাংলাদেশের প্রথম হলেও ক্রিকেট বিশ্বের ৯৯তম ক্রিকেটার হিসেবে ৫ হাজার রানের এলিট ক্লাবে নিজের নাম তোলেন মুশফিক।
মাইলফলকে পৌঁছাতে আজ বেশ সতর্ক ছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। কোনো ঝুঁকি না নিয়ে, দৃঢ়তা দেখিয়ে, নিজেকে স্থির রেখে লক্ষ্যে পৌঁছেছেন মুশফিক। আগের দিন ১৩৪ বলে করেছিলেন ৫৩ রান। আজ ১৫ রান করতে খেলেন ৪৮ বল।
২০০৫ সালে লর্ডসে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল মুশফিকের। লর্ডসের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে অভিষিক্ত হন মুশফিক। অপরদিকে তামিমের টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু ২০০৮ সালে। অবশ্য তামিমের অভিষেকের আগে মুশফিক খেলেছেন মাত্র ৪ টেস্ট। তামিমের অভিষেক ম্যাচে দুজনের পথ মিলে গিয়েছিল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তামিম নিজের ৬৬তম ম্যাচ খেলছেন। মুশফিকের ৮১তম টেস্ট।
৪ হাজার রানে তামিম পৌঁছেছিলেন সবার আগে। মুশফিক তার দেখানো পথে হেঁটেছিলেন। এজন্য তামিমের লেগেছিল ৫৫ টেস্ট, মুশফিকের ৬৬ টেস্ট। ক্যারিয়ারের শুরুতে দুজনই সংগ্রাম করেছেন রান পেতে। এরপর থিতু হওয়ার পর দুজনের ব্যাট হেসেছে আপন ছন্দে। নতুন নতুন কীর্তিতে দুজনই সাফল্যে উদ্ভাসিত হয়েছেন।
তামিম হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন ১৬ টেস্টে। মুশফিকের লেগেছিল ২০ টেস্ট। দুই হাজার রানে পৌঁছাতে তামিমের প্রয়োজন হয়েছিল ২৮ টেস্ট, মুশফিকের ৩৫। পরের হাজার রানের জন্য তামিম ১২ ও মুশফিক ১৮ টেস্ট খেলেন। এরপর ৩ থেকে ৪ হাজারে পৌঁছতে তামিম ১৭ টেস্ট এবং মুশফিক ১৫ টেস্ট খেলেন।
তামিম রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরেছেন। তারও সুযোগ আছে এই কীর্তিতে নাম উঠানোর। এই টেস্টেই যদি তামিম এ অর্জনে নাম লেখান তাহলে সমর্থকদের জন্য বড় উপলক্ষ হয়ে থাকবে।