সারা ক্রিকেটবিশ্ব জানে ব্যাটিং কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের গুরুর নাম রমাকান্ত আচার্য। শচীনকে হাতে ধরে খেলা শিখিয়েছিলেন তিনি। বিনিময়ে শচীনও তাকে যথার্থ সম্মান দিয়েছেন। বিশ্বের প্রতিটি শিক্ষকই বোধ হয় নিরন্তর সংগ্রাম করে যান শচীনের মতো ছাত্র গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু সব ছাত্র বোধহয় শচীনের মতো গুরুদক্ষিণা দিতে পারেন না। শচীনের কিংবদন্তি হয়ে ওঠার পেছনে আছে কোচ রমাকান্তের একটা থাপ্পড়ের।
রমাকান্তের ক্রিকেট স্কুলের নাম কামাথ মেমোরিয়াল ক্রিকেট ক্লাব। প্রতিদিনই স্কুলের পর শচীনের জন্য কিছু ম্যাচ রাখতেন রমাকান্ত। স্কুল ছুটি হলেই ক্লাবে গিয়ে খেলায় বুঁদ হতেন শচীন। কিন্তু একদিন শচীন উল্টো কাজ করে বসলেন। স্কুল ছুটির পর মাঠে না গিয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে চলে যান ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। তার স্কুলের ইংরেজি এবং মারাঠি মিডিয়াম ছাত্রদের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। বন্ধুর সঙ্গে অতি মনোযোগ সহকারে ম্যাচ দেখছিলেন শচীন আর চিৎকার করে নিজের দলের মনোবল বাড়াচ্ছিলেন।
ম্যাচের মাঝেই আচমকা শচীন দেখেন, দূরে তার গুরু বসে আছেন। সহজ সরল মনে বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গুরুর কাছে গিয়ে হাসি মুখে তার সঙ্গে কথা বলতে যান শচীন। শচীনের কথা শেষ হওয়ার আগেই তার দিকে উড়ে এসেছিল গুরুর চড়। কিংকর্তব্যবিমূঢ় শচীন গালে হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। তারপর গুরুর নির্দেশেই ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে বাড়ি ফিরে যান। রমাকান্ত সে দিন শচীনকে বলেছিলেন, ‘অন্যদের উৎসাহিত করা তোমার কাজ নয়। এমনভাবে খেলতে হবে, যাতে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক তোমার জন্য চিৎকার করে।’
পরবর্তী জীবনে গুরুর কথাটাই বাস্তবে করে দেখিয়েছেন শচীন। ২০১৯ সালে ৮৬ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয় রমাকান্তের। তার ৭৯তম জন্মদিনে মুম্বাইয়ের বান্দ্রার ফ্ল্যাটে সাবেক ছাত্ররা একত্রিত হয়েছিলেন। শচীন, বিনোদ কাম্বলি, অজিত আগরকর সহ হাজির ছিলেন আরও অনেকে। সেখানেই পুরনো দিনের এসব স্মৃতিচারণ করেন শচীনরা। সেই চড়ের শব্দ শচীনের কানে আজও এমন ভাবেই বিচরণ করছে যে ক্রিকেট ছাড়া আর কিছুই তিনি ভালো শুনতে পান না।