দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ভারতকে পাঁচ রানে হারিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল টাইগাররা। ২৭২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৬৬ রান তোলে রোহিত-কোহলিরা।
বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রানের সংগ্রহ পায় টাইগাররা।
ব্যাট হাতে এনামুল হক বিজয়কে দেখে মনে হচ্ছিল ছন্দে আছেন। ফ্লিক করেছিলেন, খেলেছিলেন দৃষ্টনন্দন কাভার ড্রাইভ। কিন্তু টানা দুই বাউন্ডারি হাঁকানো ওভারেই সাজঘরে ফেরত যান তিনি। মোহাম্মদ সিরাজের বল ব্যাটেই লাগাতে পারেননি বিজয়। পায়ে লাগলে আবেদনের সঙ্গেই সাড়া দেন আম্পায়ার। বাংলাদেশ রিভিউ নেয়, কিন্তু লাভ হয়নি। শুরুতে উইকেটের সঙ্গে রিভিউও হারায় স্বাগতিক শিবির। এনামুলের ব্যাট থেকে আসে ৯ বলে ১১ রান।
দ্বিতীয় ওভারে উইকেট হারানোর পর লিটন-শান্তর ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশ। কিন্তু টাইগার শিবিরে আবারও আঘাত করেন মোহাম্মদ সিরাজ। এবার লিটনকে সরাসরি বোল্ড। লিটন আউট হন ২৩ বলে ৭ রান করে।
এরপর ১৫১ কিলোমিটার গতিতে আসা উমরান মালিকের বল শান্তর অফ স্টাম্প উপড়ে ফেলে। লিটনের পর সাকিবের সঙ্গে জুটি গড়ে ভালো ইনিংসের সম্ভাবনা দেখাচ্ছিলেন শান্ত। ২১ রানে থেমে যায় তার ইনিংস। তার ৩৫ বলের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৩ চারের মারে।
নিজের ইনিংসটা বড় করতে পারেননি সাকিব আল হাসানও। ওয়াশিংটন সুন্দরের বল স্লগ সুইপ করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করেন তিনি। বল উঠে যায় উইকেটের পেছনে। সহজ ক্যাচ ধরেন শিখর ধাওয়ান। তার ব্যাট থেকে আসে ২০ বলে ৮ রান।
সাকিবের পর মুশফিকও দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেননি। সুন্দরের বল সামনে এসে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন মুশফিক। বল গ্লাভসে লেগে যায় ধাওয়ানের হাতে। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেয় ভারত। ২৪ বলে ১২ রান করেন মুশফিক। পরের বলেই আফিফ বোল্ড। প্রথম বলেই শূন্য রানে ফেরেন তিনি। ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ।
এরপরই দলের হাল ধরেছেন মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাদের ব্যাটিংয়ে ভর করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ১৪৮ রানে থামে তাদের জুটি। উমরানের বলে আউটসাইড-এজড হয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ, ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। মাহমুদউল্লাহ ফিরেন ৯৬ বলে ৭৭ রান করে।
পরে নাসুম আহমেদ নেমে মিরাজকে ভালো সঙ্গ দেন। ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন মিরাজ। অসাধারণ ইনিংসটি শেষ পর্যন্ত থেকেছে অপরাজিতই। ৮ চার ও ৪ ছক্কার ইনিংসে ৮৩ বলে ১০০ রান করেন মিরাজ। রোমাঞ্চকর অপেক্ষা শেষে ইনিংসের শেষ বলে গিয়ে পূর্ণ করেন শতক। আর নাসুম আহমদে ১১ বলে ১৮ রানের করে ছিলেন অপরাজিত।
ভারতের হয়ে ওয়াশিংটন সুন্দর তিন ও উমরান মালিক-মোহাম্মদ সিরাজ নেন দুই উইকেট করে।
জবাব দিতে ভারতের হয়ে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পাওয়া রোহিত শর্মার বদলে এদিন ইনিংস উদ্বোধনে আসেন লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলি। প্রথম বলেই চার হাঁকান কোহলি। দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে এসে তাকে সাজঘরে ফেরত পাঠান এবাদত হোসেন। ৬ বলে ১ চারে ৫ রান করেন কোহলি।
পরের ওভারে বাংলাদেশ আরও এক উইকেট নেয়। এবার মুস্তাফিজ ৮ রানে শেখর ধাওয়ানকে ফেরান। পয়েন্টে দাঁড়ানো মিরাজের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। পরে লোকেশ রাহুল ও ওয়াশিংটন সুন্দর ফিরলে ৬৫ রানেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত।
সেখান থেকে দলকে ঘুরে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন শ্রেয়াস আয়ার ও অক্ষর প্যাটেল। দুজনেই পেয়ে যান হাফ সেঞ্চুরির দেখাও। দুজন মিলে গড়েন ১০৭ রানের জুটি। এবারও বাংলাদেশের ভরসার আলো হন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাকে আকাশে ভাসিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন আয়ার। কিন্তু তিনি মিরাজের বলে ধরা পড়েন ডিপ মিড উইকেটে দাঁড়ানো আফিফ হোসেনের হাতে। ১০২ বলে ৮২ রান করেন আয়ার।
খানিক বাদেই সাজঘরে ফেরত যান অক্ষর প্যাটেলও। এবার সেই এবাদত বোলিংয়ে এসে নেন উইকেট। ৫৬ বলে ৫৬ রান করা অক্ষর ক্যাচ দেন সাকিব আল হাসানের হাতে। পরে শার্দুল ঠাকুর ৭ ও দীপক চাহার ১১ রানে আউট হওয়ার পর বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা আরও বাড়তে থাকে।
তবে চোট পাওয়া রোহিত শর্মা ব্যাটিংয়ে নামেন ৯ নম্বর ব্যাটার হিসেবে। এবাদত হোসেন ও এনামুল হক বিজয় পর পর তার দুই ক্যাচ মিস করেন। এরপর ব্যাটিং ঝড়ে ম্যাচ জমিয়ে ফেলেন রোহিত। ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ২৮ বলে ৫১ রান করলেও শেষ পর্যন্ত দলকে জেতাতে পারেননি ভারতীয় অধিনায়ক। তবে ম্যাচ নিয়ে যান শেষ বল অবধি।