ব্যাটে-বলে দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো কোনো ফরম্যাটে জিতে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৬০ রানের বড় জয়ে ১-০ ব্যবধানে লিডও নিল টাইগাররা।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দলটির বিপক্ষে এর আগে ৬ টেস্ট, ১০ ওয়ানডে (একটি পরিত্যক্ত) ও ৪ টি-টোয়েন্টি খেলে সবগুলোতেই পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। এবার প্রথম জয় পেয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন, তামিম-সাকিব-তাসকিন-মিরাজরা।
শুক্রবার সেঞ্চুরিয়নে প্রথমে ব্যাট করা বাংলাদেশ লিটন দাস, সাকিব আল হাসান ও ইয়াসির আলীর অর্ধশতকে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রান করে। দুইবার করে নিজেদের সেরা জুটির রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি এই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকায় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহও পায় সফরকারীরা। জবাবে মিরাজ-তাসকিন-শরিফুলদের তোপে ৪৮.৫ ওভারে ২৭৬ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
৩১৫ রানের বিশাল লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের সামনে কোণঠাসা হয়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। ইনিংসের শুরুতেই ওপেনার ইয়ানেমান মালানকে হারায় তারা। শরিফুল ইসলামের বলে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ তুলে ৪ রান সংগ্রহ করে বিদায় নেন তিনি। পরে দলীয় অষ্টম ওভারে জোড়া আঘাত করেন তাসকিন। ওভারের প্রথম বলে ডানহাতি এই পেসার ওপেনার কায়েল ভেরেয়ানেকে (২১) এলবির ফাঁদে ফেলেন। আর চতুর্থ বলে এইডেন মার্করামকে শূন্য রানে মেহেদি হাসান মিরাজের ক্যাচ বানান।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ও রাসি ফন ডার ডাসেন ১০৭ বলে ৮৫ করে শুরুর বিপদ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। অবশেষে এই জুটি ভাঙেন শরিফুল। ৫৫ বলে ৩১ করা এই ব্যাটারকে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমে গ্লাভবন্দি করান তিনি।
দলীয় ৩৮ ও নিজের শেষ ওভারের প্রথম বলেই বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দেন তাসকিন। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ডেভিড মিলারকে নিয়ে ৬৪ বলে ঝড়ো ৭০ রানের পার্টনারশিপ গড়েন রাসি ফন ডার ডাসেন। তবে ৯৮ বলে ৮৬ রানের ভয়ঙ্কর ইনিংস খেলা ডাসেনকে অবশেষে তুলে নেন তাসকিন। তার বলে তুলে মারতে গেলে বাউন্ডারিতে ইয়াসির দুর্দান্ত ক্যাচে তালুবন্দি করেন। ডাসেন ৯টি চার ও একটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন।
আন্ডিলে ফেলুকায়োকে ব্যক্তিগত ২ রানে মেহেদি হাসান মিরাজ ফেরালে ষষ্ঠ উইকেটের পতন হয় স্বাগতিকদের। লিটন দাসের ক্যাচে আউট হন ফেলুকায়ো। নিজের পরের ওভারে জোড়া আঘাত করেন মিরাজ। এবার মার্কো ইয়ানসেন ও কাগিসো রাবাদাকে ফেরান তিনি।
নিজের বোলিংয়ের শুরুর দিকে বাজে করা মিরাজ পরে ফিরে আসেন বেশ দাপটেই। ভয়ঙ্কর ডেভিড মিলারকে ফিরিয়ে তারই প্রমাণ দেন তিনি। ৫৭ বলে ৮টি চার ও ৩টি চক্কায় ৭৯ রান করা কিলার মিলারকে মিরাজের বলে স্টাম্পিং করেন মুশফিক।
প্রোটিয়া ইনিংসের শেষদিকে কেশভ মাহারাজ ও লুঙ্গি এনগিডি হালকা ঝড় (২০ বলে ৩৪) তুললেও জয়ের জন্য তা যথেষ্ঠ ছিল না। আর এই জুটি ভেঙে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১৬ বলে ২৩ রান করা মাহারেজ এলবি হন। ১০ বলে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন এনগিডি।
বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট পান মিরাজ। দারুণ বল করে ১০ ওভারে মাত্র ৩৬ রান দিয়ে ৩টি উইকেট দখল করেন তাসকিন। শরিফুল দুটি ও মাহমুদউল্লাহ এক উইকেট নেন।
টস হেরে এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ধীরগতির শুরু করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। সমান তালে এগোতে থাকা এ দুই ব্যাটার সময়ের সাথে সাথে স্কোর বাড়াতে থাকেন। ১০ ওভার শেষে প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৩৩ রান আসে বাংলাদেশের। দলীয় ৫০ রান পূর্ণ হয় ষষ্ঠদশ ওভারের প্রথম বলে। ৯১ বলে ৫০ রানের পার্টনারশিপ পান তামিম-লিটন।
২২তম ওভারে আন্ডিলে ফেলুকায়োর বলে এলবিডব্লিউ হন তামিম ইকবাল। ৬৭ বল খরচায় ৪১ রান করে বিদায় নেন তিনি। তামিমের পর লিটনও বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি। ৬৬ বলে অর্ধশতক তুলে নেওয়ার পরের বলেই কেশভ মাহারাজের শিকার হন তিনি।
লিটনকে বোল্ড করার পর নিজের ২৯তম ওভারে মুশফিককে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান মাহারাজ। লেগে ডেভিড মিলারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ৯ রানে বিদায় নেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার।
মুশফিকের বিদায়ের পর সাকিবকে সঙ্গ দেন ইয়াসির আলী। ফেলুকায়োর বলে ছক্কা হাকিয়ে ৫০ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন সাকিব। ৭২ বলে শতরানের জুটি গড়েন ইয়াসিরের সঙ্গে। অপরপ্রান্তে থাকা ইয়াসির ২ ছক্কা ও ৪ চারে ৪৩ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। এরপর ঝড়ো ব্যাট করতে থাকা সাকিব লুঙ্গি এনগিডির বলে এলবিডব্লিউ হন। ৬৪ বলে ৭৭ রান করে বিদায় নেন তিনি।সাকিবের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি ইয়াসিরও। ৪৩তম ওভারের প্রথম বলে রাবাদার বলে উইকেট হারান তিনি। ব্যাট করতে নামা আফিফও ১৭ রান সংগ্রহ করে বিদায় নেন। এরপর মারমুখি থাকা মাহমুদউল্লাহ উইকেট হারান ১৭ বলে ২৫ রান করে। শেষদিকে এসে ঝড়ো ইনিংস খেলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩১৫ রানের লক্ষ্য দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ১৩ বলে ২ ছক্কায় ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। অপরপ্রান্তে ৫ বলে ৭ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন তাসকিন আহমেদ।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে জোড়া উইকেট পান মার্কো ইয়ানসেন ও মাহারাজ। বাকি বোলাররা একটি করে উইকেট তুলে নেন।
দারুণ ব্যাট করা সাকিব আল হাসান ম্যাচ সেরা হন।
আগামী ২০ জোহান্নেসবার্গে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।