নাসিম রুমি: সময়টা ভালো যাচ্ছে না। আগের সেই ফর্ম নেই, মাঠের বাইরেও একের পর এক বিতর্কে নাস্তানাবুদ সাকিব আল হাসান। এই মুহূর্তে ভারতে টেস্ট সিরিজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা সাকিবের নামে দেশে হয়েছে হত্যা মামলা। সব মিলিয়ে যেন নিজের শেষ দেখতে পাচ্ছিলেন এক সময়ের তিন ফরম্যাটের বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। জাতীয় দলের ক্যারিয়ার সংক্ষিপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানছেন সাকিব আল হাসান। মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলেই লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন এক সময়ের এই নম্বর ওয়ান অলরাউন্ডার। নিজেই জানিয়েছেন এই কথা।
একই সঙ্গে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকেও বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন সাকিব। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই শেষ টি-টোয়েন্টি খেলে ফেলেছেন বলে জানান তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারও বেশি দীর্ঘায়িত করতে চান না তিনি। আগামী বছর পাকিস্তানের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকেও বিদায় নিতে চান সাকিব।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেন, ‘আমার মনে হয় টি-টোয়েন্টি তে আমি আমার শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছি, মিরপুর টেস্টে (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) খেলতে পারলে সেটি হবে আমার শেষ টেস্ট।’
চলতি বছর জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি খেলে ফেলেছেন সাকিব। সুপার এইটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচটি অবশ্য তিনি ভুলে যেতে চাইবেন। সেদিন ব্যাট হাতে মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই বিদায় নিয়েছিলেন তিনি। বল হাতেও ১৯ রান দিয়ে কোনো উইকেট শিকার করতে পারেননি।
আগামী মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশ সফরে আসবে। সেই সফরে তারা টাইগারদের বিপক্ষে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভূক্ত দুটি টেস্ট খেলবে। সেই সিরিজের পরই সাদা পোশাকের ক্রিকেটে সাকিবকে আর দেখা যাবে না।
অবশ্য টেস্ট ক্রিকেটে বেশ দীর্ঘ সময় ধরেই অনিয়মিত সাকিব। শেষ দুই বছরে মাত্র ৭টি টেস্ট খেলেছেন এই অলরাউন্ডার। তাতে ব্যাট হাতে ৩১.৭২ গড়ে ৩৪৯ রান করেছেন তিনি। নেই কোনো সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ ইনিংসটি ৮৭ রানের। এ সময়ে বল হাতেও খুব একটা সফল নন তিনি। ৩৮.৭৬ গড়ে ১৭ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। কোনো ইনিংসেই নেই পাঁচ উইকেট।
২০০৭ সালে চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয় সাকিবের। এরপর ৭০ টেস্টে ১২৮ ইনিংসে ৩৮.৩৩ গড়ে ৪৬০০ রান করেছেন সাকিব। নামের পাশে আছে ৫টি সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ২১৭ রানের।
আর বল হাতে ১১৯ ইনিংসে ৩১.৮৫ গড়ে ২৪২ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ১৯ বার ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেছেন। ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার করেছেন ২ বার। আর মাত্র ৮টি উইকেট শিকার করতে পারলে ৪ হাজার রান এবং ২৫০ উইকেট শিকারির সংক্ষিপ্ত তালিকায় নাম লেখানোর সুযোগ আছে তার সামনে।
খুলনায় ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক সাকিবের। অবসর ঘোষণার আগে ১২৯ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ১২৭ ইনিংসে ২৩.১৯ গড়ে ২৫৫১ রান করেছেন তিনি, ১২১.১৮ স্ট্রাইক রেটে। ১৩টি অর্ধশতক আছে তার নামের পাশে। সর্বোচ্চ ইনিংসটি ৮৪ রানের।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ১২৬ ইনিংসে বল করে ২০.৯১ গড়ে ১৪৯ উইকেট শিকার করেছেন সাকিব। আর মাত্র ১টি উইকেট পেলেই আড়াই হাজার রান এবং ১৫০ উইকেটের ডাবলস অর্জন করতে পারতেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে দুইবার ৫ উইকেট শিকার করেছেন সাকিব। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি সাকিব। শুধু টিম সাউদি এবং রশিদ খানই তার চেয়ে বেশি উইকেট শিকার করতে পেরেছেন।