বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে একসময় টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার হিসেবে রীতিমতো চার চাকার গাড়িই দেওয়া হতো। সেই দিন অতীত হয়েছে বেশ আগে। বিপিএলও তার বর্ণিল চেহারা হারিয়েছে। পুরস্কারের মানও কমেছে অনেক।
সর্বশেষ বিপিএলে তাই টুর্নামেন্ট সেরাকে দেওয়া হয়েছিল মাত্র ২০০০ ডলার। তখনকার সময় অনুসারে যার মান ছিল দুই লাখ টাকারও কম। বর্তমানে এই সংখ্যা দুই লাখ ছাড়ালেও বিপিএলের মতো মঞ্চের জন্য এই অর্থের পরিমাণ দৃষ্টিকটু। বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলও তাই এবার বিপিএলের সেরার পুরস্কার বাড়িয়েছে বেশ। এবার টুর্নামেন্ট সেরা হলেই দেওয়া হবে ১০ লাখ টাকা।
বিপিএলের সেরা হয়ে এই ১০ লাখ টাকা শেষ পর্যন্ত জিতে নেবেন কে? উত্তর খুঁজতে গেলে সাকিব আল হাসান, নাসির হোসেন, তৌহিদ হৃদয়, নাজমুল শান্ত থেকে শুরু করে অনেককেই বিবেচনায় নেওয়া যায়।
যেমন ইএসক্রিকইনফো ওয়েবসাইটের হিসেবে সাকিব আল হাসান মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ইমপ্যাক্ট পয়েন্ট অর্জন করেছেন। এই ক্রিকেটারের ইমপ্যাক্ট পয়েন্ট ৮২৬.২। তালিকার দুইয়ে থাকা নাসির হোসেনের চেয়েও ১৭৬ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন সাকিব। নাসিরের মোট ইমপ্যাক্ট পয়েন্ট ৬৫০.৪। ঢাকা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ায় নাসিরের ইমপ্যাক্ট পয়েন্ট বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
এই তালিকার তিন থেকে আট পর্যন্ত থাকা কোনো ক্রিকেটারের পক্ষেই আর সাকিবকে টপকানোর সুযোগ নেই। এর মধ্যে তিন থেকে ছয় পর্যন্ত থাকা রনি তালুকদার থেকে শুরু করে আজমতউল্লাহ ওমরজাই, খুশদিল শাহ, করিম জানাত, ইমাদ ওয়াশিম কিংবা জিয়াউর রহমানদের এই বিপিএলে আর মাঠে নামাই হবে না।
যদিও ইমাদ এবং খুশদিলের দল ফাইনালে খেলবে কিন্তু পাকিস্তানের সুপার লিগ খেলতে দুই ক্রিকেটারই বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন। নয় এবং দশে থাকা তানভীর ইসলাম এবং তৌহিদ হৃদয়দের সামনে ফাইনালের মঞ্চে মাঠে থাকার সুযোগ থাকলেও অন্ততপক্ষে সাকিবকে টপকানো কেবলই অসম্ভব নয় অতিকল্পনার মতো।
তানভীর এবং হৃদয়ের ইমপ্যাক্ট পয়েন্ট যথাক্রমে ৩৯৯.৬ এবং ৩৯৮.৮। যার সাকিবের মোট ইমপ্যাক্ট পয়েন্টের অর্ধেকেরও কম। অবশ্য বিপিএলের মঞ্চে কেবলই ইমপ্যাক্ট পয়েন্ট দেখে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার দেওয়া হবে, সেই ভাবনাও কিছুটা ক্লিশে হয়ে পড়ে। দলকে জিতিয়ে শিরোপা এনে দিতে পারলে নির্দিষ্ট ক্রিকেটারের পারফরম্যান্সটাই আসল বলে বিবেচিত হবে।
যেমন ব্যাট-বল হাতে দুরন্ত মৌসুম কাটালেও সাকিবকে থামতে হয়েছে প্লে-অফের এলিমিনেটরেই। অন্যদিকে ব্যাট হাতে সিলেটকে ফাইনালে তুলেছেন দলটিরই দুই লোকাল তারকা ক্রিকেটার হৃদয় এবং শান্ত। এবারের আসরে সেরা রান সংগ্রাহকের তালিকায় শান্ত এক এবং হৃদয় আছেন তিনে। এবারের আসরে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই শান্ত ৪৫২ রান তুলে ফেলেছেন। সুযোগ আছে বিপিএলের ইতিহাসের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে পাঁচ শ রানের মাইলফলক তোলার।
অন্যদিকে হৃদয়ের রান ৪০৩। শান্তর থেকেও তিন ম্যাচ কম খেলেছেন তিনি। মাঝে ব্যাট হাতে ৪২৫ রান করে রংপুরের রনি তালুকদার আছেন দুইয়ে। ফাইনাল খেলা কুমিল্লার পক্ষে ব্যাট হাতে এককভাবে দুর্দান্ত খেলার মধ্যে আর কেবল রয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে ৩৫১ রান করা এই ব্যাটসম্যান পাড়ি জমিয়েছেন পাকিস্তানে।
অন্যদিকে বল হাতে এবার সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট নিয়েছেন রংপুরের হাসান মাহমুদ। ফাইনাল খেলা দলগুলোর মধ্যে তানভীর ইসলাম দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬ উইকেট নিয়েছেন। এ ছাড়াও সিলেটের পেসার মোহাম্মদ আমির নিয়েছিলেন ১৪ উইকেট। তবে ফাইনালে আবার আমির খেলবেন না বলে পিছিয়ে থাকবেন।
অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সের বিবেচনায় এবারের আসরে সবচেয়ে বড় চমক ছিলেন নাসির। ঢাকার এই অধিনায়ক বল হাতে ১৬ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে করেছেন ৩৬৬ রান। তবে ৩৫ বছর বয়সী সাকিবের কাছে পিছিয়ে গেছেন তিনি। সাকিব এবারের আসরে ব্যাটে ঝড় তুলে করেছেন ৩৭৫ রান। স্ট্রাইক রেট ১৭৪.৪১। বল হাতেও নিয়েছেন ১০ উইকেট।
ফলে সকল সমীকরণ বিবেচনায় নিলে বিপিএলের সেরার ১০ লাখ টাকার পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে থাকেন সাকিবই। পেছন পেছন ছুটছেন নাসির, শান্ত, তানভীর এবং হৃদয়। তবে ফাইনালের মঞ্চে হৃদয়, শান্ত এবং তানভীররা অতিমানবীয় কিছু করলে সাকিবকে হঠিয়ে ১০ লাখ টাকা নিজেদের করে নিতে পারেন এই তিনজনের যে কেউই।