ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির ঘটনায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। অজ্ঞাত ৮ থেকে ৯ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেছেন বাসযাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওমর আলী। শুক্রবার মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
বাসযাত্রীরা জানান, সোমবার রাতে ঢাকা থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস ঢাকার গাবতলী থেকে ছেড়ে আসে। পথিমধ্যে চন্দ্রা এলাকায় বাসটিতে আরও কয়েকজন যাত্রী ওঠেন। পরে বাসটি টাঙ্গাইলে পৌঁছালে নতুন উঠা যাত্রীসহ আরও কয়েকজন অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। পরে তারা যাত্রীদের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে মির্জাপুর এলাকায় বাস থেকে নেমে যান। এ সময় দুই নারী যাত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয় বলেও যাত্রীরা অভিযোগ করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘গত সোমবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে নাটোরের বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশে রাজশাহীগামী বাসটিতে টিকিট কেটে উঠি, যার নম্বর ময়মনসিংহ-ব-১১-০০৬১। বাসটি রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ছাড়ার সময় বাসটিতে ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিল। পরে রাত ১টার দিকে বাসটি গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা বাইপাসে এসে চা পানের বিরতির দেয়। এ সময় চন্দ্রা বাইপাস থেকে আরও ৩ থেকে ৪ জন নতুন যাত্রী নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশে রওয়ানা করে।’
‘রাত দেড়টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন হাইটেক সিটি পার্ক সংলগ্ন খাড়াজোড়া ফ্লাইওভার ব্রিজ অতিক্রম করার ৫ থেকে ৬ মিনিট পর হঠাৎ বাসে ৮/৯ জন ডাকাত একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় এবং ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলে। এর মধ্যে তিনজন বাসটির ড্রাইভারের গলায় ধারালো চাকু ধরে চালকের আসনের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এক পর্যায়ে তারা ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে গাড়িতে থাকা সব যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার, রুপা ছিনিয়ে নিতে থাকে। এ সময় ২ থেকে ৩ জন ডাকাত গাড়িতে থাকা অজ্ঞাতনামা নারী যাত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করে। পরে ডাকাতরা বাসটি দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে সেখানে নামিয়ে দেয়।’
এর আগে, ডাকাতির শিকার হওয়া যাত্রীরা প্রথমে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় গিয়ে মামলা দায়েরের চেষ্টা করেন। কিন্তু তখন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উপস্থিত না থাকায় তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে বাসটি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিনই ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে বাসের সুপারভাইজার সুমন ইসলাম (৩৩), চালক বাবলু আলী (৩০) ও তার সহকারী মাহবুব আলমকে (২৮) থানা পুলিশ আটক করে আদালতে পাঠায়। পরে আদালত শুনানির পর তাদের জামিন মঞ্জুর করে মুক্তি দেন।
এ ঘটনায় মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে কর্তব্যরত এসআই খায়রুল বাসার নিশ্চিত করেছেন যে, ‘মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও তিনি স্বীকার করেন যে, এজাহারের সুনির্দিষ্ট তথ্য তার জানা নেই।’
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শারমিন নেলী বলেন, ‘যেহেতু ঘটনাটি তাদের আওতার মধ্যে হয়নি এবং কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি, সে কারণে সন্দেহভাজন ব্যক্তি হিসেবে তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়। বিষয়টি মির্জাপুর থানাকে জানানো হয়েছে। তারা যৌথভাবে বাস ডাকাতির বিষয়টি তদন্ত করছেন।’
এদিকে, চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণের এই ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ভুক্তভোগীরা দ্রুত ন্যায়বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।