English

23 C
Dhaka
রবিবার, নভেম্বর ১৭, ২০২৪
- Advertisement -

আমার নার্ভ খুব শক্ত, এতো সহজে স্বীকারোক্তি নেয়া যাবে না: বাবুল

- Advertisements -

সোমবার (১৭ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের খাসকামরায় তাকে হাজির করে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বিচারকের খাস কামরায় বাবুল আক্তার ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে কোনো জবাববন্দি দেননি। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী সাহাব উদ্দীন আহমেদ বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডে পাঁচলাইশ থানায় দায়ের হওয়া নতুন মামলায় আসামি বাবুল আক্তারকে পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে জবানবন্দির জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের খাসকামরায় হাজির করে পুলিশ। তবে সেখানে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সূত্রে জানা গেছে, রিমান্ডের তিনদিন মুখ খোলেননি বাবুল আক্তার। অনেকটাই বিমর্ষ ছিলেন। শেষের দুদিন শুধু বলেছেন, ‘সবই তো আপনারা জানেন। আমাকে জিজ্ঞেস করার দরকার কী?’

এ সময় সন্তানদের কথা চিন্তা করে কয়েকবার কেঁদেছেন বাবুল আক্তার। জবানবন্দি না দেয়ার ব্যাপারে সিরিয়াস ছিলেন তিনি।

বাবুল আক্তার বলেন, ‘আমার নার্ভ খুব শক্ত। এতো সহজে স্বীকারোক্তি নেয়া যাবে না।’ তবে শেষ দিকে এসে একপর্যায়ে জবানবন্দি দিতে রাজি হলেও ম্যাজিস্ট্রেটের খাসকামরায় গিয়ে মত পাল্টে ফেলেন তিনি।

জানা গেছে, বাবুল আক্তার তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে আরো একবার হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। দেশের বাইরে থেকে ওই হত্যাকাণ্ড চালানোর চেষ্টা হয়, তবে তখন বাবুলের সোর্স মুসা ব্যর্থ হন। এরপর চীন থেকে দেশে এসে বাবুল আক্তার ঢাকায় কর্মরত থাকাকালে ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে তার স্ত্রী মিতুন চট্টগ্রামে খুন হন।

সেদিন চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মিতু। তখন এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের পরই চট্টগ্রাম ছুটে আসা বাবুলকে ‘শোকাতুর’ দেখা যায়। জানাজায় স্ত্রীর জন্য তার কান্না দেখে ব্যথিত হয়েছিলেন অনেকেই। এরপর নিজে বাদী হয়ে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দায়ের করেন হত্যা মামলা। কিন্তু দুই সপ্তাহ গড়াতেই মামলার তদন্তে নেয় ভিন্ন মোড়। একই বছরের ২৪ জুন রাতে ঢাকার গোয়েন্দা কার্যালয়ে তাকে প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদেই হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত হয় পুলিশ। এরপর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বিলম্ব হওয়ায় চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ থেকে আদালতের আদেশে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই। তাদের হাতে আসা একটি মোবাইল রেকর্ড নিয়ে তদন্ত এগোতে থাকে।

সূত্র জানায়, হত্যার দিন সকাল ৭টা ৩৭ মিনিটে মুসা নামের এক ব্যক্তির মোবাইলে ফোন করেন বাবুল আক্তার। সালাম দিয়ে মুসা ফোনটি রিসিভ করতেই ওপার থেকে বাবুল আক্তার বলেন, ‘তুই কোপালি ক্যান?’ ৩ থেকে ৪ সেকেন্ড থেমে আবার বলেন, ‘বল তুই কোপালি ক্যান? তোরে কোপাতে কইছি?’ এরপর ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন বাবুল আক্তার।

সর্বশেষ বাবুল আক্তারকে মামলার বাদী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চলতি বছরের ১২ মে চট্টগ্রামের পিবিআই কার্যালয়ে ডাকেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। সেখানে মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়ায় তাকে হেফাজতে নেয়া হয়।

এর পরদিন গত ১২ মে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। একই দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন মিতুর বাবা ও সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন।

ওই মামলায় বাবুল আক্তার ছাড়াও বাকি সাত আসামি হলেন- কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসা (৪০), এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া (৪১), মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম (২৭), আনোয়ার হোসেন (২৮), খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু (২৮), সাইদুল ইসলাম সিকদার (৪৫) ও শাহজাহান মিয়া (২৮)।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে দায়িত্ব পালনকালে গায়ত্রী অমর সিং নামে এক বিদেশি এনজিও কর্মীর প্রেমে পড়েন বাবুল আক্তার। পরে বাবুল সুদানে মিশনে গেলে বাসায় থাকা মোবাইলের সূত্র ধরে সেই প্রেমের সম্পর্ক জেনে যান বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু।

হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে বাবুল চীনে গেলে মিতুর হাতে আসে দুটি বই। ওই বইয়ের বিভিন্ন পৃষ্ঠায় দুজনের হাতের লেখায় উঠে আসে তাদের প্রেমের আদ্যোপান্ত। বাবুল আক্তার দেশে এলে বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করে মিতুর পরিবার। এর কিছুদিন পর বাবুল আক্তার তার সোর্স ও বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে কৌশলে খুন করান মিতুকে।

এরপর মামলার দ্বিতীয় আসামি ও মিতু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা মুসার বিষয়টি আবার উঠে আসে। হত্যাকাণ্ডের ১৭ দিন পর ২২ জুন থেকে তিনি নিখোঁজ হন।

মুসার স্ত্রী পান্নার দাবি, মুসাকে বন্দর থানা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে পুলিশ পরিচয়ে উঠিয়ে নেয়া হয়। এরপর থেকে তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে বিভিন্ন জনের কাছে ধরনা দিয়েও স্বামীর সন্ধান পাননি তিনি। ওই সময় স্বামীর সন্ধান চেয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন তিনি।

এক পর্যায়ে ওই বছরের ৬ অক্টোবর মুসার সন্ধান দিতে পারলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা দেন সিএমপির তৎকালীন কমিশনার ইকবাল বাহার।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, মামলার যথাযথ তদন্তের স্বার্থে রিমান্ডের বিষয়ে কোনো কিছু বলা উচিত হবে না। মামলার অন্যতম আসামি মুসাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া মুসার বিষয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ইতোমধ্যে কারাগারে থাকা আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ারকে নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে আদালত আদেশ দিয়েছেন।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন