সুনামগঞ্জে আলোচিত পাঁচটি অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় একসঙ্গে ৫ আসামিকে যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই দণ্ডাদেশ দেন।
যাবজ্জীন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো, রিপন মিয়া, রোকন মিয়া, শাহিন মিয়া, শৈলেন দাস ও আসাদ মিয়া। আসাদ মিয়ার বাবা ইদন মিয়া ও মা জগৎ বানুকে খালাস দিয়েছেন আদালত। একসঙ্গে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় এ রায়কে অভিনন্দন জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা।
এদিকে এই আদালতের বিচারক ইতোপূর্বে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শিশুদের প্রবেশনসহ স্বামী ও স্ত্রীদের মামলায় সংসার করার শর্তে স্বামীদের জামিন দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। এবার একসঙ্গে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় ৫ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও দিলেন তিনি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ৫ আগস্ট সদর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের রিপন মিয়া তেরাপুর গ্রামের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় কিশোরী গর্ভবতী হয়ে এক পুত্র সন্তান জন্ম দেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ চার্জশিট দাখিল করার পর রাষ্ট্রপক্ষ স্বাক্ষ্য প্রমাণাদি পর্যালোচনা করে আসাদ মিয়াকে ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এক লক্ষ টাকা জরিমানা প্রদানের আদেশ দেন।
এদিকে ধর্মপাশা উপজেলার ফাতেমানগর গ্রামের মো. ওয়াহেদ আলীর পুত্র রিপন মিয়া ২০১১ সালের ২ এপ্রিল একই গ্রামের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণ করে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা থানায় মামলা করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে চার্জশিট প্রদানের পর আদালত স্বাক্ষ্য প্রমাণাদি পরীক্ষা করে আসামি রোকন মিয়াকে যাবজ্জীবন কারা দণ্ডাদেশ ও এক লক্ষ টাকা জরিমানা প্রদানের আদেশ দেন।
২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর জগন্নাথপুর উপজেরার ইছাকপুর গ্রামের আলকাছ উল্লার ছেলে শাহিন মিয়া উপজেলার হারগ্রাম গ্রামের ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে স্কুলে যাওয়ার পথে তুলে নিয়ে সিলেটের ভোলাগঞ্জে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র প্রদানের পর আদালত স্বাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে শাহিন মিয়াকে যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ প্রদান এবং এক লক্ষ টাকা জরিমানা প্রদানের আদেশ দেন।
২০১৩ সনের ১৫ ১৫ মার্চ সদর উপজেলার ইছাগড়ি গ্রামের জিতেন্দ্র দাসের ছেলে শৈলেন দাস নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদাল স্বাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে শৈলেন দাসকে যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ এবং এক লক্ষ টাকা জরিমা আদায়ের আদেশ দেন।
বিশ্বম্ভরপুর থানার মিয়ারচর গ্রামের আসাদ মিয়া আমড়িয়া গ্রামের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে স্কুলে যাওয়ার পথে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা তার বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা করেন। পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়ার পর আদালত স্বাক্ষ্য প্রমাণাদি পর্যালেচনা করে আসাদ মিয়াকে যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ দেন। মামলার অন্য আসামি তার বাবা ইদন মিয়া এবং মা জগৎ বানুকে খালাস দেন।
সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতদন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি এডভোকেট নান্টু রায় বলেন, আদালত একসঙ্গে ৫টি মামলার যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। বিচারক বিভিন্ন সময়ে সাক্ষীদের বক্তব্য পর্যালোচনা করেছেন, বাদী-বিবাদীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারপরও উপযুক্ত স্বাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তিনি আলোচিত রায় দিয়েছেন। এই রায়ের ফলে সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতে সমাজে অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনা কমবে।