সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমদ হত্যার প্রায় ৭ মাসের মাথায় অবশেষে মামলাটির চার্জশিট (অভিযোগপত্র) জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বুধবার (৫ মে) বেলা ১১টার দিকে পাঁচ পুলিশ সদস্য সহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে সিলেটের চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে চার্জশিটটি জমা দেওয়া হয়। অভিযুক্ত ৬ জনের মধ্যে একজন পলাতক রয়েছেন।
দাখিলকৃত অভিযোগপত্রে ৬৯জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে। সেই সাথে আলোচিত এই মামলায় ১৬৪ ধারায় ১০জন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দী প্রদান করেন। ২২ পৃষ্টার অভিযোগপত্রে ৬জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে অভিযুক্তরা হচ্ছেন, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, টুআইসি এসআই হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও আব্দুল্লাহ আল নোমান। এদের মধ্যে কোম্পানীগঞ্জের আব্দুল আল নোমান ছাড়া সবাই কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া ৫জন কারাগারে থাকলেও নোমানকে পলাতক দেখানো হয়েছে অভিযোগপত্রে।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম এ ফজল চৌধুরী জানান, পিবিআই দাখিলকৃত অভিযোগপত্রে আপাতত কোন অসংঙ্গতি চোখে পড়েনি। তবে অভিযোগপত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র তুলার পর বিস্তারিত জানা যাবে।
অভিযোগপত্র নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন বলেন, জড়িত সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তাহলে আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে। আমি মরে যাওয়ার আগে আসামীদের শাস্তি দেখে যেতে চাই এটা আমার প্রত্যাশা।
অভিযোগপত্রের কপি আমাদের কাছে আসারপর তা দেখে আমারা সিদ্ধান্ত নেব অভিযোগ পত্রের বিরুদ্ধে না রাজি দিবো কি, দিবো না।
পিবিআই জানায়- অধিকতর তদন্ত ও চলমান প্যান্ডামিকের কারণে মামলাটির অভিযোগপত্র দিতে কিছুটা দেরি হয়েছে। বহুল আলোচিত রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র পিবিআই পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। পিবিআই দাখিলকৃত অভিযোগপত্রে এসআই আকবরসহ ৫ পুলিশকে অভিযুক্ত করেছে।
উল্লেখ্য গত ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে গুরুতর আহত হন রায়হান নামের ওই যুবক। তাকে ওইদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেক ই এলাহীসহ পুলিশ সদস্যরা। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান রায়হান।
রায়হান হত্যাকাণ্ডের পরদিন ১২ অক্টোবর তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলে তদন্তের প্রেক্ষিতে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রশাসন। এখন পর্যন্ত ৫ পুলিশ সদস্যসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সবাই কারাগারে আছেন।