চট্টগ্রামে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতাকর্মী ও পুলিশসহ ১৮৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলায় আসামি যুবলীগ কর্মী কফিল উদ্দিন।
গত সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার শিকার হয়েছেন দাবি করে মামলাটি করেন তিনি। আদালত বাদীর জবানবন্দী শুনে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ৪ আগস্ট নগরের নিউমার্কেট গোলচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। ওই দিন আসামিদের কয়েকজনের নির্দেশ ও পরিকল্পনায় বাকি আসামিরা গুলি করেন ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এতে কফিল হাতে আঘাত পান। ঘটনার পর হাসপাতালে ভর্তি হন। ঘটনায় জড়িত আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ ও সুস্থ হতে সময় লাগায় মামলা করতে দেরি হয়।’
মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মোতালেব, মজিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ, পিবিআইয়ের সাবেক প্রধান বনজ কুমার মজুমদার, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, সাবেক পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি ওবায়দুল হক, নেজাম উদ্দিন, মোহাম্মদ মহসীন, জাহিদুল কবির, এসআই বোরহান উদ্দিন, খাজা এনাম এলাহীসহ ২৬ পুলিশ কর্মকর্তা। এ ছাড়া নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম, সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ, ওয়াসিম উদ্দিন, মোবারক আলীকেও আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগের এক মামলায় কফিল উদ্দিন নিজেও আসামি। গত ১০ নভেম্বর কোতোয়ালি থানায় ২৭৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন মো. রাইয়ান নামে এক যুবক। তবে যুবলীগ কর্মী হয়ে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি এখন সবার মুখে মুখে। কফিল নগরের নন্দনকানন এলাকার একটি থাই অ্যালুমিনিয়ামের দোকানে চাকরি করেন। তার বাসাও নন্দনকানন ও বাড়ি আনোয়ারায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কফিল নিজেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলায় আসামি। পুলিশের খাতায় রয়েছে অস্ত্র, মাদকসহ আরও তিন মামলা। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক উপ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত তিনি। বিভিন্ন মিছিল-সমাবেশে তার সঙ্গে যোগও দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নগরের কোতোয়ালি থানায় অস্ত্র, মাদকসহ তিনটি মামলা এবং আনোয়ারা থানায় একটি জিডি আছে। গ্রেফতার হয়ে একাধিকবার কারাগারেও গেছেন।
মামলার বাদী কফিল উদ্দিন বলেন, ‘আমি যুবলীগ-ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তবে বিবেকের তাড়নায় আন্দোলনে ছিলাম। সরকারদলীয় রাজনীতি করলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলাম। কারণ, রাজনীতিতে আমি বৈষম্যর শিকার, আমার পদপদবি ছিল না। এটা সত্য আমি বাবর ভাইয়ের সঙ্গেও ছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো রাজনৈতিক। পুলিশ আমাকে তুলে নিয়ে মামলা দিয়েছে শুধু শুধু। এগুলো বিচারাধীন। এগুলোর সত্যতা নেই।’