চট্টগ্রামে খুন হওয়া চাঞ্চল্যকর রেলওয়ে কর্মচারী শফিউদ্দিন হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি রয়েছেন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে শিপন হাওলাদার ও নাইমুল ইসলাম ইমন নামের দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হতে যাচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১৯ বছর পর কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে তাঁদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে বলে জানান সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ।
সোমবার সন্ধ্যায় সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ বলেন, ‘এরই মধ্যে উভয় আসামির পরিবারের লোকজন তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
মঙ্গলবার সকালে পরিবারের লোকজন দুজনের সঙ্গে শেষ দেখা করবেন। রাতে উভয়ের ফাঁসি কার্যকর হবে। এরপর মরদেহ স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করা হবে।
নিহত শফিউদ্দিন বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী-১ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০০৩ সালের ১৪ জুন চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীর উত্তর আমবাগান রেলওয়ে কোয়ার্টারের ৩৬/এ বাসায় বাসায় ঢুকে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত শিপন হাওলাদার চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীর দক্ষিণ আমবাগানের মৃত ইউনুছ হাওলাদারের ছেলে। তাঁর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নন্দনসার গ্রামে। আর নাইমুল ইসলাম ইমন চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার ডেবারপাড় এলাকার ঈদুন মিয়া সরকারের ছেলে। তাঁর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রতনপুর পূর্ব পাড়া এলাকায়।
মামলার অভিযোগপত্র ও কুমিল্লা কারাগারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী-১ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী ছিলেন শফিউদ্দিন। এ ছাড়াও তিনি ছিলেন স্থানীয় রেলওয়ে আমবাগান এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। শফিউদ্দিন এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মদ, জুয়া ও রেলওয়ের অবৈধ সম্পদ দখলের প্রতিবাদে সোচ্চার থাকার কারণে রেলওয়ের জায়গা থেকে চার দফায় অবৈধ বস্তি ও কলোনি উচ্ছেদ করতে বাধ্য হয় প্রশাসন। এসব ঘটনার জের ধরে একদল লোক তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ২০০৩ সালের ১৪ জুন সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাঁর সরকারি বাসায় ঢুকে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে শফিউদ্দিনকে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মাহমুদা বেগম বাদী হয়ে খুলশী থানায় হত্যা মামলা করেন। ২০০৪ সালের ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২৩ জনের সাক্ষ্য নিয়ে এ হত্যা মামলায় শিপন ও ইমনকে ফাঁসি, সাত আসামিকে যাবজ্জীবন এবং চারজনকে খালাস দেন।
সোমবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. আসাদুর রহমান বলেন, ‘২০০৪ সাল থেকেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই আসামি কারাগারে রয়েছেন। গত প্রায় তিন বছর ধরে তাঁদের কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। ‘ তিনি বলেন, ‘সাজার বিরুদ্ধে আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত রিভিউ খারিজ করে দেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষার আবেদন করা হলে সেটিও খারিজ হয়। ‘
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ আরো বলেন, উচ্চ আদালতে ফাঁসির সাজা বহাল রাখা এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে কারাবিধি অনুসারে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হয়। এ ছাড়া কারাবিধি অনুসারে অন্যান্য আরো কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছে। ফাঁসি কার্যকর করার জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।