কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজসে ৫ বছরের আয়কর রিটার্ন ও রেজিস্ট্রার ঘষামাজা করে আয়, সম্পদ ও পারিবারিক ব্যয়ের অংকে পরিবর্তন করার অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সহিদ ইসলাম পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও দুই কর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন অঞ্চল-৪ এর উপ-কর কমিশনার খন্দকার মো. হাসানুল ইসলাম ও কর অঞ্চল-৮ এর উচ্চমান সহকারী হিরেশ লাল বর্মণ।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪২০/৪৬৭/ ৪৬৮/ ৪৭১/১০৯ -সহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সহিদ ইসলাম পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ২০২১ সালের শেষে কর সার্কেল-১৬৫, কর অঞ্চল-০৮, এর অফিসে কর্মরত কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ২০১৬-২০১৭ করবর্ষ থেকে ২০২০-২০২১ করবর্ষ পর্যন্ত রিটার্ন একই দিনে তড়িঘড়ি করে দাখিল করেন। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে কর সার্কেলের যাবতীয় রেজিস্ট্রারে ঘষামাজা করে টাকার অংক পরিবর্তন-পরিমার্জন হয়েছে।
এছাড়া জেসমিন প্রধানের ২০১৬-২০১৭ থেকে ২০২০-২০২১ করবর্ষ পর্যন্ত মোট ৫ করবর্ষের আয়কর রিটার্নগুলো রিটার্ন রেজিস্ট্রারে যথাক্রমে ৮৬৮, ৬৫৩, ৭৮০, ১১০১ এবং ৫৬ নম্বর ক্রমিকে এন্ট্রি হয়। রিটার্ন রেজিস্ট্রারের রেকর্ড থেকে দেখা যায় মোট আয়ের কলামে ঘষামাজা, ৭৪ ধারার কর কলামে ঘষামাজা, ব্যবসায় মূলধন বিনিয়োগ কলামে ঘষামাজা, হাতে নগদ ও ব্যাংক স্থিতি কলামে ঘষামাজা, রিটার্ন রেজিস্ট্রারে নিট সম্পদ কলামে ভিন্ন হাতের লেখায় বিভিন্ন সংখ্যা বসানো, রিটার্ন রেজিস্ট্রারে পারিবারিক ব্যয়ের যে তথ্য লেখা রয়েছে তা আয়কর রিটার্নে ভিন্ন পাওয়া গেছে।
জানা যায়, আয়কর নির্ধারণী আদেশপত্রে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর রিটার্ন দাখিলের তারিখেই করদাতাকে ওই মাসের ৩১ তারিখে শুনানির জন্য ৭৯ ও ৮৩ (১) ধারায় নোটিশ জারি করা হয়েছিল। সার্কেল কর্মকর্তা খন্দকার মো. হাসানুল ইসলামের কাছে করদাতার পক্ষে আয়কর আইনজীবী মো. আদনান শুনানি গ্রহণ করেন। শুনানি শেষে ২০২০-২০২১ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। নথিপত্র অনুসারে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সাধারণ ধারায় রিটার্ন দাখিল করলেও রিটার্নের সঙ্গে ৭৪ ধারায় প্রদেয় আয়কর ছিল ৯ লাখ ৬৮ হাজার ১২৫ টাকা। যদিও ওইদিন কর দাখিল হয়নি, পরবর্তী সময়ে ১৪ ডিসেম্বর পে-অর্ডারে ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের গুলশান শাখার মাধ্যমে পরিশোধ করেছেন। আয়কর নথিতে খন্দকার মো. হাসানুল ইসলাম অনুস্বাক্ষরিত ও ক্যানসেল লেখা চারটি চেক সংরক্ষিত জব্দ করা হয়েছে। যা বৈধতা নিয়ে সন্দেহ থেকে গেছে।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জেসমিন প্রধান কর অঞ্চল-৮ এর কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে ২০১৬-২০১৭ করবর্ষ থেকে ২০২০-২০২১ করবর্ষ পর্যন্ত রিটার্ন একই দিনে দাখিল করে সার্কেলের যাবতীয় রেজিস্ট্রারে ঘষামাজা করে টাকার অংক পরিবর্তন-পরিমার্জন করেছেন। ওই সার্কেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দ্বারা রিটার্ন রেজিস্ট্রার ঘষামাজা করে মোট আয়, মোট সম্পদ, নিট সম্পদ, পারিবারিক ব্যয় ইত্যাদির পরিবর্তন করার সঙ্গে আসামিরা জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।
এর আগে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল এবং তার স্ত্রী এমপি সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান এবং মেয়ে ওয়াফা ইসলামের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর মামলা করে দুদক। আসামিদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ১৪৮ কোটি টাকা লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয় মামলায়।