সড়ক পরিবহন আইনের বিধান অনুযায়ী সারা দেশে বাস-মিনিবাসের স্ট্যান্ডে ও দৃশ্যমান জনসমাগম স্থলে গণপরিবহনের ভাড়ার তালিকা টাঙানো ও ইলেকট্রনিক বিলবোর্ডে সে তালিকা প্রদর্শনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে বাস-মিনিবাসসহ গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কার্যেকর ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) আগামী এক মাসের মধ্যে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দেকার দিলিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আবেদনকারী আইনজীবী মো. আবু তালেব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ‘গণপরিবহনের আসন সংখ্যা ও ভাড়া নির্ধারণ’ সংক্রান্ত ৩৪ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো গণপরিবহন, সহজে দৃশ্যমান স্থানে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন ব্যতীত, যাত্রী পরিবহণ করিতে পারিবে না। ’ আর ৩৪ (৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো গণপরিবহনের মালিক, চালক, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উপ-ধারা (২)-এর অধীন নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় করিতে পারিবে না। ’
সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর বিধিমালা প্রণযন না করে ভবিষ্যতে বাস-মিনিবাসসহ সব ধরনের গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা চেয়ে গত ৪ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেছিলেন আইনজীবী মো. আবু তালেব। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মুসতাসীম তানজীর। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আইনজীবী আবু তালেব বলেন, ‘গত বছর ১ ডিসেম্বর বিবাদীদের কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। সে নোটিশে গণপরিবহনে বেআইনি, অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক ভাড়া বৃদ্ধি, ভাড়া বাড়ানোর নামে সাধারণ যাত্রী হয়রানি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু বিবাদীদের কাছ থেকে কোনো জবাব পাইনি। এমনকি দাবির বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। যে কারণে পরে জনস্বার্থে রিট আবেদনটি করেছি। ’
এ আইনজীবী বলেন, ‘সরকার সংশ্লিষ্ট আইনের বিধিমালা না করেই গণপরিবহনের ভাড়া বাড়াচ্ছে। এর ফায়দা লুটছে গণপরিবহন মালিক, চালক এবং পরিবহনের স্টাফরা। অন্যদিকে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। ভাড়া আদায়ের নির্ধারিত হার থাকলেও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এমনকি গণপরিবহন শ্রমিকদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। এ নৈরাজ্য এবং জুলুম থেকে নিষ্কৃতি দরকার। ’
সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ১২২ ধারা অনুযায়ী আইনটির বিধিমালা প্রনয়ণ না করতে পারার ব্যর্থতা, একই আইনের ৩৪ (৩) ধারার বিধান অনুযায়ী গণপরিবহনের ভাড়ার তালিকা প্রকাশ্য ও দৃশ্যমান স্থানে না টাঙিয়ে ভাড়া আদায় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা এবং ৩৪ (৪) ধারার বিধান অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, সহকারী সচিব, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান, পরিচালককে (প্রকৌশল) চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।