স্ত্রী ইসরাত জাহানের করা পারিবারিক সহিংসতা আইনের মামলার অভিযোগে জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার আল-আমিন হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পেছাল। আগামী ২ নভেম্বর পরবর্তী প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার মামলার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসি নতুন এ তারিখ ধার্য করেন।
এর আগে গতকাল আদালতে হাজির না হওয়ায় আল-আমিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। বুধবার ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এ পরোয়না জারি করেন।
মামলায় এদিন আল-আমিন আদালতে হাজির হতে না পারায় আইনজীবী সময় আবেদন দিয়েছিলেন। কিন্তু বাদী পক্ষে আইনজীবী সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত বাদী পক্ষের আবেদন গ্রহণ করে পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। বাদীর আইনজীবী মো. শামসুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ৬ অক্টোবর শুনানিতে আল আমিন আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জবাব দাখিল করেন। জবাবে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৫ আগস্ট স্ত্রীকে তিনি রেজিস্ট্রার্ট তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছেন। যেহেতু তালাক হয়েছে, তাই তিনি স্ত্রীর প্রাপ্য মোহরানা ও ইদ্দতকালীন খরপোষ দিতে রাজি আছেন। আর দুই সন্তানের ভরণপোষণ তিনি নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছেন। যদিও স্ত্রী তালাকের নোটিশ পাননি বলে জানান।
এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর স্ত্রী ইসরাত জাহানের করা মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পান আল-আমিন।
এরও আগে আল-আমিনের স্ত্রী ইসরাত জাহান গত ৭ সেপ্টেম্বর আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। ওইদিন আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর আল আমিনকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন।
একসাথে বসবাসের অধিকার, মাসিক ভরনপোষণ ও সন্তানদের খরচ দাবি করে এ মামলা করেন বাদী।
মামলায় বলা হয়, ২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক ইসরাত জাহান ও আল-আমিন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজে ইংরেজী ভার্সনে কেজিতে পড়ালেখা করছে। বেশ কিছুদিন যাবৎ আল-আমিন স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণ প্রদান করেন না এবং খোঁজও না নিয়ে এড়িয়ে চলছেন। যোগাযোগও করেন না।
আরও বলা হয়, গত ২৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১০ টার দিকে আল আমিন বাসায় এসে স্ত্রীর কাছে যৌতুকের জন্য ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। ইসরাত জাহান টাকা দিতে অস্বীকার করলে আল-আমিন তাকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষিসহ লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। সংসার করবে না বলে জানায়। ইসরাত জাহান ৯৯৯-এ টেলিফোন করে সাহায্য চাইলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ইসরাত জাহান। এ ঘটনায় ১ সেপ্টেম্বর মিরপুর মডেল থানায় যৌতুক আইনের একটি মামলাও হয়।
সর্বশেষ গত ৩ সেপ্টেম্বর আল-আমিন তার মায়ের মাধ্যমে জানান, ইসরাতের সাথে সংসার করবে না এবং সন্তানদের ভরণপোষণ দিবেন না। প্রয়োজনে বাসা থেকে বের করে দিয়ে স্ত্রীকে তালাক দিবেন। পরকীয়ায় আসক্তের কারণে একাজ করেছে এবং একজন মহিলার সাথে উঠানো ছবি ইসরাতে কাছে পাঠায়।
মামলায় বলা হয়, আল-আমিন স্ত্রী-সন্তানদের বাসা থেকে বের করে অন্যত্র বিয়ে করবেন বলে জানান। দুই বছর যাবৎ আসামি বাদীর খোঁজখবর নেয় না এবং বাসায় নিয়মিত থাকে না। যার কারণে ইসরাত তার দুই সন্তানসহ বসতবাড়িতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করার অধিকারসহ মাসিক ভরনপোষণ দাবি করে মামলাটি দায়ের করলেন। জীবন ধারণের জন্য ৪০ হাজার, দুই সন্তানের ভরনপোষণ ও ইংলিশ মিডিয়ামে লেখাপড়াবাবদ ৬০ হাজার টাকা আল-আমিনের কাছে পাওয়ার হকদার বলে মামলায় বলা হয়।
উল্লেখ্য, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে গত ১ সেপ্টেম্বর আল আমিনের স্ত্রী ইসরাত জাহান আরেকটি মামলা করেন। সে মামলায় গত ৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিন পান আল আমিন।