এক বছর আগে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে খুন হন রফিকুল ইসলাম (৪৫) নামের এক ব্যক্তি। সেই খুনের মামলায় স্ত্রী বাদী হলেও দীর্ঘ তদন্তের পর অবশেষে স্ত্রীই হচ্ছেন খুনের প্রধান আসামি! সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সীতাকুন্ড থানায় মামলাটি দায়ের করা হয় (মামলা নম্বর- ৪৬)। এর আগে রবিবার নাটোর জেলার সিংড়া আনন্দনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে রফিকুলের স্ত্রী উম্মে সালমাকে আটক করে পিবিআই। তাকে সীতাকুন্ড থানায় হস্তান্তর করা হয়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, স্ত্রী উম্মে সালমার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে প্রতিবেশী সাকিবের। পরে সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দুইজন মিলে পরিকল্পনা করে স্বামী রফিকুল ইসলামকে হত্যার ছক আঁকেন। তাও আবার ৩০ হাজার টাকায় ‘খুনি’ ভাড়া করে। পরে লাউ ক্ষেতে গলা কেটে হত্যা করা হয় রফিকুল ইসলামকে।
পরবর্তীতে নাটকীয়ভাবে আবার স্বামীকে খুনের অভিযোগে নিজে বাদী হয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানায় মামলাও করেন উম্মে সালমা। কিন্তু ঘটনার এক বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বিস্তৃত তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, ওই নারীই আসলে স্বামীর অন্যতম হত্যাকারী।
পিবিআই কর্মকর্তা নাজমুল হাসান জানান, নাটোরে বাড়ি হলেও রফিকুল ইসলাম স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি ইউনিয়নের বিএমএ গেইট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর রাতে সাকিব রফিকুলকে ফোন করে ঘটনাস্থলে ডেকে আনে। সালমা দূরে দাঁড়িয়েছিল। এমরান ও সাকিব মিলে তাকে গলাকেটে লাশ ফেলে রাখে লাউক্ষেতে।
৪ ডিসেম্বর সকালে সীতাকুণ্ড-হাটহাজারী সড়কের পাশে একটি লাউক্ষেত থেকে রফিকুল ইসলামের জবাই করা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার স্ত্রী উম্মে সালমা বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা দায়ের করেন। সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ মো. এমরান (২৪) নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে।
তবে মামলার তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় পরবর্তীতে সেটির দায়িত্বভার আসে পিবিআই’র কাছে। চলতি বছরের অক্টোবরে পিবিআই মৃত রফিকুলের প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া সাকিবুল ইসলাম সাকিবকে (২০) গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়। এরপর সাকিব ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যার বর্ণনা দেয় এবং এমরান ও উম্মে সালমার জড়িত থাকার কথা প্রকাশ করে।
পিবিআই জেলে থাকা এমরানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এমরানও আদালতে জবানবন্দি দিয়ে অভিন্ন তথ্য দেয়। এসব তথ্যের ভিত্তিতে উম্মে সালমাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান এসপি নাজমুল।
আসামিদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. কামাল আব্বাস বলেন, ‘পাশাপাশি বাসা হওয়ায় উম্মে সালমা ও সাকিবের মধ্যে অবৈধ প্রণয় গড়ে ওঠে। কিছুদিন পর রফিকুল বিষয়টি জেনে যান। তখন তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এদিকে সাকিব তাকে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের জন্য চাপ দেয়। তখন সালমা বলেন যে, আমি তাকে দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দিচ্ছি। এরপর পূর্ব পরিচিত এমরানকে ৩০ হাজার টাকায় স্বামীকে হত্যার জন্য ভাড়া করে সালমা।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন