ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার কোণ্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিক উল্লাহ চৌধুরী হত্যা মামলায় সাত আসামিকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছে বাদীপক্ষ।
আতিক উল্লাহ চৌধুরী হত্যা মামলায় আজ বুধবার (২ ডিসেম্বর) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত সাত আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে অন্য আসামি শম্পাকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
এছাড়া ২০১ ধারায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাত বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছরের জেল দেওয়া হয়েছে।
এ মামলার আসামিরা হলেন গুলজার হোসেন, আশিক, শিহাব আহম্মেদ ওরফে শিবু, আহসানুল কবির ইমন, তাজুল ইসলাম তানু, জাহাঙ্গীর খাঁ ওরফে জাহাঙ্গীর এবং রফিকুল ইসলাম ওরফে আমিন ওরফে টুণ্ডা আমিন। আদালত এদের মধ্যে শম্পাকে বেকসুর খালাস দিয়ে বাকি সাতজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
মামলার বাদী ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার কোণ্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘আদালতের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা, ভরসা ছিল। আজ আদালত আমাদের কাঙ্ক্ষিত রায় ঘোষণা করেছেন। এই রায়ে কোণ্ডা ইউনিয়নবাসীর বিজয় হয়েছে। আমরা রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি। তবে এই রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয় সেই দাবি করছি।’
সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমার বাবা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে থাকেন। সেই সময় ভূমিদস্যু বিভিন্ন হাউজিং কম্পানি কোণ্ডা ইউনিয়নে সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে হিন্দু ও হতদরিদ্র মানুষের জমি দখল করে নেয়। তখন বাবা তাদেরকে বাধা দেন, ভুক্তভোগীদের জমি উদ্ধারে সোচ্চার হন। মূলত বাবা চেয়ারম্যান হিসেবে নয়, গরিব-দুঃখী মানুষের বন্ধু হিসেবে কাজ করতেন। এসব কারণে আমার বাবাকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।’
‘দীর্ঘ সাত বছর পর বাবা হত্যা মামলায় রায় পেলাম। তবে এখন তো বাবাকে ফিরে পাব না। এখন এলাকাবাসী আমার বাবা হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিদের দ্রুত রায় কার্যকর দেখতে চায়’- বলেন সাইদুর রহমান।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১০ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন মুক্তিযোদ্ধা ও ইউপি চেয়ারম্যান আতিক উল্লাহ চৌধুরী। পরদিন ১১ ডিসেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর এলাকার একটি হাসপাতালের পাশ থেকে তাঁর আগুনে পোড়া বিকৃত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আসামিরা তাঁকে হত্যা করে এবং মৃতদেহ গোপন করার উদ্দেশ্যে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলে রাখে। পরে তাঁর সঙ্গে থাকা কাগজ ও এটিএম কার্ড দেখে লাশ শনাক্ত করেন নিহতের ছেলে সাইদুর রহমান ফারুক চৌধুরী।
ওই ঘটনায় নিহতের ছেলে কোণ্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান ফারুক চৌধুরী বাদী হয়ে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
এ মামলার আসামিদের মধ্যে শম্পা, জাহাঙ্গীর ও আহসানুল কবীর বর্তমানে কারাগারে। গত ১০ আগস্ট আদালত জামিন বাতিল করে আসামিদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অপর আসামিরা পলাতক।
পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর পর একই বছরের ২ জুলাই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
গত ১০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এ মামলা চলাকালে বিভিন্ন সময় মোট ২১ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন