মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি ও শাফাকাত হোসেন পিয়ালের পরিবারে ছিল শিশু কন্যা। ভালোই চলছিল তাঁদের সংসার। এরই মধ্যে তিন্নির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে গড়ে ওঠা এমন সম্পর্কের একপর্যায়ে অভির পরামর্শে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তিন্নি-পিয়ালের দাম্পত্য জীবন। মেয়েকেসহ স্বামীকেও বের করে দেন ঘর থেকে। কিন্তু, অভি তখনও সেই বিয়ের আশ্বাসকে বাস্তবায়ন করেননি। পরে মিডিয়ায় তথ্য ফাঁস করে দেবেন বলে হুমকি দিলে প্রাণ হারাতে হয় তিন্নিকে।
২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর পুলিশের তদন্তকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক আদালতে যে অভিযোগপত্র দেন, তাতে উঠে আসে এসব তথ্য।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘গোলাম ফারুক অভির সঙ্গে ভুক্তভোগী তিন্নির দৈহিক সম্পর্ক ছিল। অভি বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিন্নির সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে জড়ান।’
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ‘তদন্তের সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী সাক্ষী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন সানজিদুল ইসলাম ইমন বলেন, ইমন যখন ভারতে পালিয়ে ছিলেন, তখন গোলাম ফারুক অভির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। সে সময় অভি কথার প্রসঙ্গে বলেন, মডেল তারকা তিন্নির সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। অভি তিন্নিকে দিয়ে তাঁর স্বামী পিয়ালকে ডিভোর্স দেওয়ান। পরে তিন্নিকে বিয়ের আশ্বাস দেন। এই আশ্বাসে তিন্নির সঙ্গে দৈহিক মেলামেশা করেন এবং তিন্নির বাসায় রাতযাপন করেন। এভাবে তাঁদের অবৈধ সম্পর্ক চলতে থাকে। কিন্তু, বিয়ে না করায় তিন্নি অভির গোপন তথ্য মিডিয়াতে ফাঁসের হুমকি দেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে অভি তিন্নির মাথা ধরে ধাক্কা দেন। তিন্নি মাথায় আঘাত পান এবং পরক্ষণেই মারা যান।’
ইমনের বরাতে অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ‘অভি তাঁর গাড়িতে করে তিন্নির মরদেহ বুড়িগঙ্গা সেতুর নিচে ফেলে রাখেন। পরে অভি ভারতে পালিয়ে যান।’
ওই অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা এক সময় গ্রেপ্তার তিন্নির স্বামী শাফাকাত হোসেন পিয়াল, এবায়দুল্লাহ ওরফে স্বপন গাজী ও গাজী শরিফ উল্লাহ ওরফে তপন গাজীকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করেন।
আলোচিত মামলাটি ঢাকার ৭ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক কেশব রায় চৌধুরীর আদালতে বিচারধীন আছে। আগামী ৩১ নভেম্বর এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য আছে। গত ৫ জানুয়ারি এ মামলায় বিচার চেয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহাবুব করিম ও চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম।
এর আগে এ মামলায় রায় ঘোষণার জন্য গত বছরের ১৫ নভেম্বর দিন ঠিক ছিল। কিন্তু, সেদিন মামলার গুরুত্বপূর্ণ দুই সাক্ষী তিন্নির বাবা ও চাচা সাক্ষ্য দিতে চাইলে আদালত রায় মূলতবি করে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ঠিক করেন। অবশ্য তিন্নির চাচার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়নি। তাঁর আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
এদিকে, এই মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত সাক্ষী ও কয়েদি সানজিদুল ইসলাম ইমনের সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এ বিষয়ে আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ভোলানাথ দত্ত এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সানজিদুল ইসলাম ইমন এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। রাষ্ট্রপক্ষ মনে করছে, এই সাক্ষীর সাক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সাক্ষী ও কয়েদি আসামি সানজিদুল ইসলাম ইমনের সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। বাকি সাক্ষীদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষ্য নিলে মামলায় সঠিক রায় পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’