মাদারীপুরের শিবচরে স্পিডবোট-বাল্কহেড সংঘর্ষে ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় বোটের মালিক-চালকসহ চারজনের নামে মামলা হয়েছে। শিবচর থানায় সোমবার (৩ মে) গভীর রাতে মামলাটি করে নৌপুলিশ। তাতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে আহত বোটচালককে।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আসামিদের মধ্যে ঘাটের ইজারাদারও রয়েছেন। তবে চালক ছাড়া অন্য আসামিদের বিস্তারিত পরিচয় জানাননি তিনি।
বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথের কাঁঠালবাড়ী ঘাট এলাকায় সোমবার সকালে দাঁড়িয়ে থাকা বাল্কহেডে ধাক্কা দিয়ে উল্টে যায় যাত্রীবোঝাই একটি স্পিডবোট। সেখান থেকে একে একে উদ্ধার করা হয় শিশুসহ ২৫ জনের মরদেহ। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান আরো একজন। জীবিত উদ্ধার করা হয় স্পিডবোটের চালকসহ পাঁচজনকে।
শিমুলিয়ার নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক শাহাদাত হোসেন জানান, ‘উল্টে যাওয়া স্পিডবোটটির নিবন্ধন ছিল না। চালকের যোগ্যতা সনদও নেই। এই নৌ-রুটের বেশির ভাগ নৌযানের একই অবস্থা’।
আহত চালক শাহ আলমকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাকে মামলায় আটক দেখিয়েছে পুলিশ।
থানার ওসি মিরাজ বলেন, স্পিডবোটটি যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে কাঁঠালবাড়ীর কাছাকাছি পৌঁছালে ঘাটে নোঙর করে রাখা বাল্কেহেডের পেছনে এর ধাক্কা লাগে।
এ ঘটনায় মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আজহারুল ইসলামকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
যাঁরা মারা গেছেন তাঁরা হলেন-
খুলনার তেরখাদার বারুখালীর মনির মিয়া (৩৮), হেনা বেগম (৩৬), সুমী আক্তার (৫) ও রুমি আক্তার (৩), ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার চরডাঙ্গা গ্রামের আরজু শেখ (৫০) ও ইয়ামিন সরদার (২), মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার সাগর ব্যাপারী (৪০), কুমিল্লার দাউদকান্দির কাউসার আহম্মেদ (৪০) ও রুহুল আমিন (৩৫), কুমিল্লার তিতাসের জিয়াউর রহমান (৩৫), মাদারীপুরের রাজৈরের তাহের মীর (৪২), মাদারীপুরের শিবচরের হালান মোল্লা (৩৮) ও শাহাদাত হোসেন মোল্লা (২৯), বরিশালের তেদুরিয়ার আনোয়ার চৌকিদার (৫০), মাদারীপুরের রায়েরকান্দির মাওলানা আব্দুল আহাদ (৩০), চাঁদপুরের উত্তর মতলবের মো. দেলোয়ার হোসেন (৪৫), নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার রাজাপুরের জুবায়ের মোল্লা (৩৫), মুন্সীগঞ্জ সদরের সাগর শেখ (৪১), বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের সায়দুল হোসেন (২৭) ও রিয়াজ হোসেন (৩৩), ঢাকার পীরেরবাগের খোরশেদ আলম (৪৫), ঝালকাঠির নলছিটির এস এম নাসির উদ্দীন (৪৫), বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের মো. সাইফুল ইসলাম (৩৫), পিরোজপুরের চরখামারের মো. বাপ্পি (২৮) ও পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার জনি অধিকারী (২৬)। অপর নিহত যাত্রী বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের মনির হোসেন জমাদ্দারের (৩৫) নাম নিশ্চিত হলেও পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।