গুরুতর অসুস্থ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট মঙ্গলবার (২৪মে) অ্যাম্বুলেন্সে করে আত্মসমর্পণের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে হাজির হয়েছেন। সকাল ১০ টা ৫৫ মিনিটে তিনি আদালত প্রাঙ্গণে যান।
এদিকে সম্রাটের আত্মসমর্পণের খবরে সকাল ৯টার আগে থেকেই আদালতপাড়ায় জড়ো হতে শুরু করেন তার অনুসারীসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী। আদালতপাড়ায় সম্রাট প্রবেশের পর আওয়ামী লীগ, যুবলীগের কয়েক হাজার নেতাকর্মী দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। তারা ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা, উন্নয়নের আরেক নাম শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
গত ১১ মে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় জামিন পেয়েছিলেন সম্রাট। এরপর গত ১৮ মে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ সম্রাটের জামিন বাতিল করেন। একইসঙ্গে তাকে সাতদিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়।
জানা যায়, জামিন পাওয়ার আগ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন সম্রাট। সেখান থেকে গত ১১ মে তাকে চার্জ গঠন ও জামিন শুনানির জন্য আদালতে নিয়ে আসা হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান স্বাস্থ্যগত ও মানবিক দিক বিবেচনায় তিন শর্তে ৯ জুন পর্যন্ত সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করেছিলেন। এদিন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জামিনে মুক্ত হন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। সরিয়ে নেয়া হয় পাহারায় থাকা কারারক্ষীদের।
এরপর গত ১২ মে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, সম্রাটের উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। এ কারণে বাইরের কোনো দেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়াটা জরুরি।
এর আগে, গত ৩১ মার্চ ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ -এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান দুদকের মামলায় সম্রাটের উপস্থিতিতে জামিন শুনানির জন্য ১৩ এপ্রিল দিন ধার্য করেন। এদিন ক্যানোলা হাতে সম্রাটকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে জামিন না মঞ্জুর করে এই মামলায় চার্জগঠন শুনানির জন্য ১১ মে ধার্য করেন আদালত।
এদিকে, গত ১১ এপ্রিল ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহসিন ইফতেখার শুনানি শেষে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় রমনা থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় তার জামিন মঞ্জুর করেন।
অপরদিকে, গত ১০ এপ্রিল অস্ত্র মামলায় ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফায়সাল আতিক বিন কাদের এবং অর্থপাচার মামলায় ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন জামিন মঞ্জুর করেন।
সম্রাটের পারিবার সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে চিকিৎসক দেবী শেঠীর অধীনে সম্রাটের ওপেন হার্ট সার্জারির মাধ্যমে হার্টে ভালভ প্রতিস্থাপন করা হয়। তখন থেকে সম্রাট অসুস্থ শরীর নিয়েও দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
সম্রাটকে গ্রেফতারের পর ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে তার মা সাহেরা খাতুন চৌধুরী বলেন, সম্রাট শেখ হাসিনার পরীক্ষিত সৈনিক, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের লোক। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন সম্রাট। ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের সভা-সমাবেশ সফল করতে সবসময় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন সম্রাট। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে তার ছেলেকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হচ্ছে।
এর আগে, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে তাকে নিয়ে দুপুর দেড়টার দিকে তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। পরে বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখার দায়ে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই দিনই রাত পৌনে ৯টার দিকে সম্রাটকে কারাগারে নেয়া হয়।