সাভারের ধামরাইয়ে গরু চুরির মামলায় ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের বহিস্কৃত ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক বাবলী আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। চার্জশিটের অন্য আসামিরা হলেন- মো. হাবুল সরদার, আরিফ হোসেন, রাজু আহম্মেদ, শাহাদাত হোসেন, মো. সাইদুল ইসলাম, মো. মোর্শেদ আলী।
গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক মো. আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, চুরি করা গরু বেচাকেনা করার হোতা ছিলেন ছাত্রলীগ নেত্রী বাবলী। এ তথ্যের সত্যতা পাওয়ায় তার নামে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর গরু চুরির ঘটনায় আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে ধামরাই থানায় মামলা করেন। এ মামলায় ওই বছরের ২ নভেম্বর ভোরে সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই ছাত্রলীগ নেত্রীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন। এছাড়া নাম ঠিকানা না পাওয়ায় পলাতক গরু চোর শহীদ ও ট্রাক চালকের অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ২৩ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সাতদিনে ধামরাই উপজেলার লাড়ুয়াকুন্ডসহ কয়েকটি গ্রাম থেকে ২০টি গরু চুরি হয়। এর মধ্যে ধামরাইয়ের লাড়ুয়াকুন্ড গ্রামের আব্দুল লতিফের একটি ষাড় ও একটি গাভী গত ৩০ অক্টোবর রাতে চুরি হয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা। ওই রাতেই এলাকাবাসী ধাওয়া দিয়ে হাবুল সরদার নামে এক চোরকে আটকের পর গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। হাবুল সরদার বরিশাল জেলার মুলাদী থানার মৃত কদম আলী সরদারের ছেলে। এ ঘটনায় গরুর মালিক আবদুল লতিফ বাদি হয়ে ধামরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
পরে পুলিশ আটক হাবুল সরদারের স্বীকারোক্তিতে ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক বাবলী আক্তার ও চোরাই গরু বহনকারী ট্রাকচালক রিপনসহ বেশ কয়েকজনের সম্পৃক্ততা পান। এরপর ধামরাই থানা পুলিশ গত ৩ নভেম্বর ভোরে সাভারের রেডিও কলোনির নয়াবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগ নেত্রী বাবলী আক্তার, রাজু আহমেদ (২৪), রিপন ওরফে আরিফ (২২), শাহাদাৎ হোসেনকে (২৮) গ্রেফতার করে।
মামলার চার্জশিটে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ২৯ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে সাভারের ধামরাইয়ের আব্দুল লতিফ তার দুইটি গরু গোয়াল ঘরে রেখে দরজায় তালা মেরে ঘুমাতে যান। এরপর রাত সাড়ে তিনটির দিকে বাইরে শব্দ শুনতে পান। ঘুম থেকে উঠে দেখেন ৪/৫ জন চোর তার দুইটি গরু ট্রাকে তুলে চলে যাচ্ছে। তখন তিনি চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন বের হন। ট্রাক থেকে লাফ দিয়ে পালাতে গিয়ে আহত হন আসামি হাবুল সরদার। এরপর স্থানীয় জনসাধারণ তাকে আটক করে। আসামি আরিফ হোসেন, রাজু আহম্মেদ, শাহাদাত হোসেন, মো. মোর্শেদ আলী ও পলাতক আসামি শহীদ গরু দুইটি চুরি করে নিয়ে এসে আসামি বাবলী আক্তারের কাছে বিক্রয় করে। এরপর আসামি বাবলী লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে গরুগুলো পুনরায় উল্লেখিত আসামিদের মাধ্যমে বেশি দামে অন্যত্র বিক্রয় করেন।
আরও বলা হয়, ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর গাজীপুর থেকে আসামি সাইদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় চুরি হওয়া দেড় লাখ টাকা মূল্যের গর্ভবতী গাভি উদ্ধার করা হয়। এরপর আসামি সাইদুল ইসলাম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করে- সে একজন কসাই। ধামরাইয়ের মোরশেদ ও শহীদের কাছে থেকে দুইটা গরু ক্রয় করেছেন। আসামি হাবুল সরদার, আরিফ হোসেন, রাজু আহম্মেদ, শাহাদাত হোসেন, মোর্শেদ আলী ও পলাতক আসামি শহীদ এবং অজ্ঞাত চালকের বিরুদ্ধে এই মামলার পেনাল কোড ৪৫৭/৩৮০ ধারার অপরাধ, আসামি বাবলীর বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৪১৩ ধারার অপরাধ এবং আসামি সাইদুল ইসলাম বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৪১১ ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। পলাতক আসামি শহীদ ও ট্রাকের অজ্ঞাতনামা চালকদ্বয়ের সঠিক নাম ঠিকানা না পাওয়ায় মামলার দায় হতে অব্যাহতির প্রার্থনা করা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে তাদের নাম ঠিকানা পাওয়া গেলে এ মামলার সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হবে।