ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’— এর অগ্রভাগের প্রভাবে রাজধানীর অন্তত দুই শতাধিক স্থানে ভেঙে পড়েছে গাছ। কোথাও কোথায় তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। অধিকাংশ স্থানেই স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ, ট্রাফিক বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনের লোকজন সড়ক থেকে গাছ সরিয়ে নিয়েছেন। তবে এখনো যান চলাচল বিঘ্নিত রয়েছে বেশি কিছু সড়কে।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ফায়ার সার্ভিস আ্যন্ড সিভিল ডিফেন্স, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম বিভাগ ও ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর থেকে ভোরপর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গাছ ভেঙে পড়ে। তবে এতে কোনো হাতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। সিত্রাংয়ের অগ্রভাগের প্রভাবে ভারি বৃষ্টির সঙ্গে সন্ধ্যার পরে ঢাকায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। ঢাকায় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে সচিবালয়ের দিকে একটি বড় ইউক্যালিপটাস গাছ ভেঙে পড়ে। গাছ ভেঙে পড়ে রাস্তার অনেকটা অংশ বন্ধ হয়ে যায়।
রমনা ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জয়নুল আবেদীন বলেন, মৎস্য ভবনের সামনে একটি লেনে যান চলাচল বিঘ্নিত রয়েছে। রাতে একটি বড় গাছ পড়ে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে, নিউমার্কেট এলাকায় একটি গাছ এখনো সড়কে পড়ে আছে। সেখানে একটি লেন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছে, তারা কাজ করছেন।
তিনি বলেন, সিত্রাংয়ের প্রভাবে রমনা ট্রাফিক এলাকার অন্তত ২৫ স্থানে গাছে ভেঙে পড়ে। খবর পাওয়ার পর থেকে খুব দ্রুতই স্থানীয়দের সহযোগিতায় ট্রাফিক পুলিশ সেগুলো অপসারণে কাজ শুরু করে। পরে সেখানে সিটি করপোরেশনের লোকজন যোগ হয়ে অপসারণ করে। আপাতত মৎস্য ভবন ও নিউমার্কেট এলাকায় সমস্যা রয়ে গেছে।
অন্যদিকে, মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মইনুল হাসান বলেন, মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২৪টি স্থানে গাছ পড়ার খবর পেয়েছিলাম। অধিকাংশ স্থানেই অপসারণ সম্ভব হয়েছে। তবে শান্তিনগর পুলিশ লাইনের বিপরীতে ডিটিএসের সামনে একটি বড় গাছ পড়েছে। তা এখন পর্যন্ত সরানো সম্ভব হয়নি। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অনেক বার্তা দেওয়ার পর ডিটিএস কর্তৃপক্ষ তাদের লোকজন আসার পর গাছ অপসারণের কাজ শুরু করেছে। সিটি করপোরেশনকেও জানানো হয়েছে। এছাড়া গুলিস্তানের মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামের সীমানার ভেতরে বড় একটি গাছ ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
ট্রাফিক মতিঝিল বিভাগের রামপুরা ট্রাফিক জোনে বনশ্রী ইউলুপের মুখে গাছ ভেঙে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। সার্জেন্ট শুভ কুমার দে ফোর্সসহ গাছ কেটে যান চলাচল স্বাভাবিক করেছেন।
অন্যদিকে, রাত ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়েরবাগ বাস স্টপেজের কাছে উত্তর রায়েরবাগে প্রবেশের মুখে বাঁশের একটি তোরণ ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সকালে সেটি অপসারণ করা হয় বলে জানিয়েছে ওয়ারী ট্রাফিক বিভাগ।
রাজধানীর গুলশান ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) রবিউল ইসলাম বলেন, অনেক স্থানেই গাছ পড়ে চলাচল বিঘ্নিত হয়েছিল। আমরা এরই মধ্যে সবার সহযোগিতায় অন্তত ৩০ স্থানে স্বাভাবিক করতে পেরেছি। বেশকিছু স্থানে এখনো সমস্যা রয়েছে। তবে যান চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার মতো নয়।
তিনি বলেন, ইসিবি চত্বর, গুলশান-২ থেকে নতুন বাজার রুটে বড় গাছ পড়েছিল। সব অপসারণ করা হয়েছে। তবে জলাবদ্ধতার কারণে দুটি স্থানে এখনো যান চলাচল বিঘ্নিত রয়েছে। উত্তরা থেকে কুড়িল ফ্লাইওভারের ঢালে পানি জমেছে। ঢাকা গেটের ওখানেই জলাবদ্ধতা আছে। সেখানে সিটি করপোরেশন লোকজন কাজ করছে।
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাহেদ আল মাসুদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে তেজগাঁও ট্রাফিক এলাকায় অন্তত ৩০ স্থানে গাছ পড়েছে। রাতেই অনেক স্থানে গাছ অপসারণ করা হয়েছে। সকালে মোহাম্মদপুর, ঢাকা উদ্যান, শ্যামলী, আদাবর, তাজমহল রোড, আগারগাঁওসহ বেশি কিছু সড়কে পড়ে থাকা গাছ ও ডালপালা অপসারণ করা হয়। তবে, জলাবদ্ধতার কারণে সোনারগাঁও রুটে যান চলাচল বিঘ্নিত রয়েছে। সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, ক্ষুদে বার্তায় ট্রাফিক উত্তরা বিভাগ জানিয়েছে— ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্তের কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে খিলক্ষেত উত্তরা হয়ে গাজীপুরমুখী যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এমতাবস্থায়, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এ সড়ক ব্যবহার না করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
রাজধানীর ওয়ারী, লালবাগ, উত্তরা, মিরপুর ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে— অন্তত অর্ধশতাধিক গাছ ও ডালপালা পড়ে থাকায় যান চলাচল বিঘ্নিত রয়েছে।