রাজধানীর নান্দনিক এলাকা হাতিরঝিলকে ‘জনগণের সম্পত্তি’ ঘোষণা করে সেখানে হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা অবৈধ ও এখতিয়ারবহির্ভূত মর্মে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে হাতিরঝিল এলাকার সব বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রায়ে চার দফা নির্দেশনাসহ ৯টি পরামর্শ দিয়েছেন আদালত।
রায়ে বলা হয়, সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদী রায় মোতাবেক রাজধানী ঢাকার ফুসফুস বেগুনবাড়ী খালসহ হাতিরঝিল এলাকা যা ‘হাতিরঝিল’ নামে পরিচিত পাবলিক ট্রাস্ট প্রপার্টি (Public Trust Property) তথা জনগণের জাতীয় সম্পত্তি।
রাজধানীর হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রজেক্টকে পাবলিক ট্রাস্ট (জনগণের সম্পত্তি) ঘোষণা করে ২০২১ সালের ৩০ জুন হাইকোর্টের উল্লিখিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
হাতিরঝিলের ব্যবসায়িক স্থাপনা উচ্ছেদে জারি করা রুলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, হাতিরঝিলের পানি এবং এর নজরকাড়া সৌন্দর্য অমূল্য সম্পদ। এ অমূল্য সম্পদকে কোনোভাবেই ধ্বংস বা ক্ষতি করা যাবে না।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ ও সঞ্জয় মন্ডল । রাজউকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী ও আশেক মোমিন।
রায়ে বলা হয়, পানির প্রতিটি ফোটা অতি মূল্যবান। পানির চেয়ে তথা সুপেয় পানির চেয়ে মূল্যবান আর কোনো সম্পদ এ পৃথিবীতে নেই। সুতরাং প্রতি ফোটা পানির দূষণ প্রতিরোধ একান্ত আবশ্যক।
পরামর্শসমূহের মধ্যে হাতিরঝিল এলাকায় পায়ে চলার রাস্তা, বাইসাইকেল লেন, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক লেন তৈরির পাশাপাশি পানির জন্য ক্ষতিকর লেকে এরকম সব যান্ত্রিক যান তথা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে।
রায়ে আদালত আরও বলেছেন, There is no ‘planet B’। দ্বিতীয় কোনো পৃথিবী নেই। এ পৃথিবী ব্যতিত আর কোনো গ্রহে পানির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে এক ফোঁটা পানি এ পৃথিবীর বাইরে থেকে আনতে সক্ষম হয়নি। অথচ উক্ত খরচের শত ভাগের এক ভাগ টাকা খরচ করলে আমরা আমাদের গ্রহের পানিকে দূষণমুক্ত ব্যবহারযোগ্য রাখতে সক্ষম। হাতিরঝিলের পানি এবং এর নজরকাড়া সৌন্দর্য অমূল্য সম্পদ। এ অমূল্য সম্পদকে কোনোরূপ ধ্বংস বা ক্ষতি করা যাবে না।
রায়ে রিট মামলাটি একটি চলমান আদেশ হিসেবে অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া যেসব প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া হাতিরঝিল ও পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক প্রচারণা ও সোচ্চার ভূমিকা পালন করে চলেছে রায়ে তাদের অভিনন্দন জানানো হয়েছে।