রাজধানীর একাধিক পশুর হাট থেকে অন্তত ছয় জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। মাত্র দুই দিনেই তিনটি হাট থেকে এই ছয় জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।
হাট তিনটি হলো উত্তরার উত্তরখান ও ১৭ নম্বর সেক্টরের হাট এবং বনশ্রী আফতাব নগরের হাট। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নিজেদের এলাকায় এবছর আটটি অস্থায়ী হাটের অনুমতি দেয়। এগুলো হলো – বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) ই ব্লকে সেকশন-৩–এর খালি জায়গা, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরখান মৈনারটেক শহীদ নগর হাউজিং (আবাসিক) প্রকল্পের খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদনগর) অস্থায়ী পশুর হাট, মোহাম্মদপুরের বছিলায় ৪০ ফুট সড়কসংলগ্ন রাজধানী হাউজিং, স্বপ্নধরা হাউজিং-বছিলা গার্ডেন সিটির খালি জায়গা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন ৩০০ ফুট সড়কসংলগ্ন উত্তর পাশেরসালাম স্টিল লিমিটেড-যমুনা হাউজিং কোম্পানি- ব্যক্তিমালিকানাধীন খালি জায়গা। এছাড়াও গাবতলীয় স্থায়ী পশুর হাটসহ কোরবানির পশু কেনাবেচায় এবার নয়টি হাট বসেছে ঢাকার উত্তরে।
এই নয়টি হাটের প্রতিটিতে একটি করে মোট নয়টি করোনা টেস্ট বুথ রয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের উদ্যোগে অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে মাত্র আধা ঘণ্টায় এসব বুথ থেকে করোনা টেস্ট করে ফলাফল জানানো হয়।
ব্র্যাক থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শনিবার (১৭ জুলাই) এসব বুথ থেকে ৫৬ জনের অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়। এর মধ্যে দু’জনের শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। অন্যদিকে রোববার (১৮ জুলাই) ৩৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে চার জনের শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়।
অর্থ্যাত প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন টেস্ট কম হলেও মাত্র এক দিনের ব্যবধানে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়। দুই দিনে আক্রান্তের গড় হার ছয় দশমিক পাঁচ দুই (৬.৫২) শতাংশ।
ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির পরিচালক মোর্শেদা চৌধুরী বলেন, রোববার করোনা শনাক্ত হওয়া চারজনের মধ্যে দু’জন উত্তরখানের হাট থেকে শনাক্ত হন। তাদের একজনের বয়স ২২ ও অন্যজনের ২৩ বছর। এছাড়া বাকি দু’জনের একজন আফতাব নগরের হাট থেকে এবং অন্যজন উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের হাটে ছিলেন।
এ বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্রেতারা আসছেন। কেউ হয়তো চাপাইনবাবগঞ্জের মতো সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে আসছেন। তাদের জন্যই হাটগুলোতে এই করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরজন্য আমি ব্র্যাক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। এই বুথ থেকে যে সুবিধাটি পাওয়া যাবে সেটি হচ্ছে, অনেকেই হয়তো জানেন না যে, তারা করোনায় আক্রান্ত। তাদেরকে বুথের টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করা যাবে এবং সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টার মাঝে তাদেরকে আলাদা সরিয়ে নেওয়া যাবে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান হাটে করোনা রোগী শনাক্তের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমরা কিন্তু বারবার বলছি যে, হাটে যতো কম আসা যায়। তবুও মানুষজন আসছেন। কম বয়সী এবং বয়োজ্যেষ্ঠ্যদের আসতেও আমরা নিরুৎসাহিত করছি তবুও দেখেন তারা আসছেন। হাটে আমরা সবার জন্য বিনামূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রেখেছি, মাস্ক রেখেছি। কেউ চাইলেই সেখান থেকে মাস্ক নিয়ে নিতে পারেন বিনামূল্যে। এই মাস্কগুলো আমরা প্রতিটি ৫টাকা দরে কিনেছি, বাইরে সাধারণত কিনতে গেলেও ৭-৮ টাকা। প্রায় পাঁচ লক্ষ মাস্ক বিনামূল্যে বিতরণের জন্য রেখেছি। হিসেব করে দেখেন কতগুলো টাকা আমরা এখানে ব্যয় করছি। এছাড়াও নাগরিকদের সচেতন করতে বারবার স্বাস্থ্যবিধিগুলো মাইকিং করা হচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদেরকে সেগুলো বলা হচ্ছে। এরপরেও কিছুটা সচেতন হওয়া তো অন্তত নাগরিকদের দায়িত্ব। আমরা নিজেরা নিজেদের ভালোটা না বুঝি! করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে – সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, সব সময় মাস্ক পরা এবং জীবাণুনাশক দিয়ে হাত ধোয়া।
নাগরিকেরা যদি এই কাজটুকু নিজেরা সচেতন হয়ে না করেন তাহলে কত তাদেরকে তাগিদ দিয়ে করানো যায়
প্রসঙ্গত, পশুর হাটগুলোতে থাকা ব্র্যাক এর করোনা টেস্টের বুথে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত করোনা পরীক্ষা করা যাবে। প্রতিটি বুথে একদিনে ১৫০ জনের টেস্টের সক্ষমতা রয়েছে। হাটে আসা যেকোনো ব্যক্তির মধ্যে করোনা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা গেলে তাকে এখানে টেস্ট করানো হবে। ফলাফল পাওয়া যাবে আধা ঘণ্টার মধ্যে। সেটি হালনাগাদ করা হবে কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটেও। এরজন্য আগে থেকে নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না। তবে সরকার নির্ধারিত ১০০ টাকা করে ফি দিতে হবে।