মহামারি করোনাভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত দুই বছরে ঈদুল ফিতর ও আজহায় মোট চারটি ঈদের জামাত জাতীয় ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়নি। এবার পরিস্থিত অনেকটা স্বাভাবিক। নিরাপত্তা শঙ্কাও নেই বলে জানাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাতও হবে। ঈদের জামাত ও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে তাই নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা।
পুলিশ বলছে, রমজানে ঢাকা মহানগরীতে বড় কোনো অঘটন না হলেও ঈদ কেন্দ্র করে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকবে পুলিশের একাধিক টিম। পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করবে। কোনো হামলা-নাশকতার হুমকি না থাকলেও ঈদ জামাত থেকে শুরু করে সরকারি ছুটির ওই সময়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি বা গুজব সৃষ্টির বিরুদ্ধেও সতর্ক থাকবে পুলিশের সাইবার ইউনিট। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও নিবিড় পর্যবেক্ষণ।
এছাড়াও ঈদকেন্দ্রিক ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীর সার্বিক নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়েও কাজ করছে পুলিশ, র্যাবসহ দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকও করেছেন।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের অদূরে নৃশংস জঙ্গি হামলায় চারজন নিহত হন। সে ঘটনার পর থেকে প্রতিবছর ঈদুল ফিতর বা ঈদ জামাত ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শোলাকিয়া ছাড়াও দেশের বড় বড় ঈদ জামাত এবং স্থাপনা ঘিরেও বিশেষ নজরদারি থাকে। অন্যদিকে ঈদের ছুটিতে বিপুলসংখ্যক মানুষ রাজধানী ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যান। এ সময়ে ফাঁকা রাজধানীতে চোর-ডাকাত ও ছিনতাইকারীসহ পেশাদার অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। ফলে এ সময়ে ঈদের আগে-পরের মোট সাত থেকে আটদিন বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি)।
গত দুবছরের চেয়ে এ বছরে করোনার প্রভাব অনেকাংশে কম থাকায় ঈদগাহসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই জনসমাগম অনেক বেশি থাকবে। তাই নিরাপত্তা প্রস্তুতি সেভাবেই নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তারা জানান, ঢাকা মহানগরীতে ঈদকেন্দ্রিক চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঠেকাতে এবারও কয়েক স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছে ডিএমপি ও র্যাবসহ দায়িত্বশীল একাধিক সংস্থা। এছাড়া ঈদের জামাত কেন্দ্র করে রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ এবং জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ বড় কয়েকটি মসজিদ ও মাঠে থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে রাষ্ট্রপতি ঈদের নামাজে অংশ নিলে সেখানে থাকবে তুলনামূলকভাবে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর ব্যবস্থাসহ ডগ স্কোয়াড এবং সোয়াট টিম সতর্ক থাকবে সেখানে। সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা নিয়োজিত থাকবে আগে থেকেই। পাড়া-মহল্লায় টহল বৃদ্ধিসহ সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা রাখবে।
ঈদের ছুটি কাটাতে বাড়ি ফেরা মানুষদের ঘরে থাকা স্বর্ণালঙ্কার পার্শ্ববর্তী আত্মীয়-স্বজনের কাছে রেখে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঈদের সময় প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য নগরবাসীর অনেকেই গ্রামের বাড়িতে যান। তাদের বাসাবাড়ি ফাঁকা থাকে। এসময় যেন কোনো ধরনের অঘটন না ঘটে, সেজন্য বাসাবাড়ির নিরাপত্তাপ্রহরীদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
গত ১৯ এপ্রিল সচিবালয়ে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থতি পর্যালোচনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ঈদুল ফিতরের ছুটিতে কূটনৈতিক পাড়াসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং দেশের সব বন্দরে পুলিশের টহল জোরদার থাকবে। শ্রম মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে একটি সভা করেছি। সে সভায় বেতন-বোনাস পরিশোধ এবং ছুটির বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা বাস্তবায়নে আমরা জোর দিচ্ছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঈদের প্রাক্কালে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে পোশাকধারী পুলিশ সদস্যসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও কাজ করছে। বিশেষ বিশেষ রাস্তা ও মোড়ে চেকপোস্ট স্থাপন এবং জাল টাকার বিস্তার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আসন্ন ঈদ উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঈদের ছুটিতে পুলিশের পক্ষ থেকে আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে যায়, ফলে বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় থাকে। যার ফলে চুরি-ডাকাতি, সম্পদহানির আশঙ্কা থাকে। এ নিয়ে গত ১৫ দিন ধরে আমরা কাজ করেছি, এ সময়ে একাধিক চোর-ডাকাতপার্টিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তবে নিজ বাড়ির নিরাপত্তার প্রাথমিক দায়িত্ব নিজেকেই পালন করতে হবে। ঈদের ছুটির সময়ে পুলিশি টহল বৃদ্ধিসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর ঈদের ছুটিতে ফাঁকা বাসায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও নিরাপত্তা জোরদার হবে।
ডিসি ফারুক হোসেন আরও বলেন, পুরো জাতীয় ঈদগাহ এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ চেকপোস্ট, আর্চওয়ে ও ক্যাম্প। পুরো ঈদগাহ এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ মনিটরিং করা হবে। ঈদগাহের নিরাপত্তায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া পোশাকে ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখবেন।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঈদকেন্দ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা নেই। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। তবুও পূর্ব গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার বিষয় মাথায় রেখে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও সাইবার ইউনিট সক্রিয়। জাতীয় ঈদগাহ এলাকায় র্যাবের ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। র্যাবের ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে।