বগুড়ার শিবগঞ্জের উথলী গ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নবান্ন উৎসব উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সকাল থেকেই করোনা প্রাদুর্ভারের মধ্যেও বসেছে মাছের মেলা। এ মেলায় ঢল নেমেছিল আশপাশের প্রায় শতাধিক গ্রামের মানুষের। এবারের মেলায় দুই শতাধিক দোকানে মাছ কেনাবেচা হয়েছে। শুধু মাছই নয় নবান্ন উপলক্ষে বিপুল পরিমান চিড়া, মুড়ি, দই, নানান ধরনের মিষ্টি, শিতকালীন নতুন শাক সবজি সহ বিভিন্ন ধরণের খাবারের পসরা সাজিয়ে ক্রেতা বিক্রেতায় মুখরিত হয়েছিল উথলী হাটের ওই মেলায়।
পঞ্জিকা অনুসারে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বাংলা বর্ষের অগ্রহায়ন মাসের প্রথমেই নবান্ন উৎসব পালন করেন। এবারো নবান্ন উৎসব উপলক্ষে উথলী গ্রামে মাছের মেলা বসে। মেলা উপলক্ষে রথবাড়ি, নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, আকনপাড়া, গরীবপুর, দেবীপুর, গুজিয়া, মেদেনীপাড়া, বাকশন, গনেশপুরসহ প্রায় শতাধিক গ্রামের মানুষ আগেই মেয়ে-জামাইদের নিমন্ত্রণ করে। ঐতিহ্য মেনে নিমন্ত্রিতরা মাছ নিয়ে যান শ্বশুরবাড়িতে। ধুমধাম করে শ্বশুরবাড়িতে চলে খাওয়া-দাওয়া।
মেলাতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উঠেছে। মেলায় বড় আকারের মাছ কেজিপ্রতি ৮০০ থেকে ১ হাজার এবং মাঝারি আকারের ২০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মেলায় মাছের পাশাপাশি সবজির পসরাও সাজিয়ে বসেছিলেন বিক্রেতারা। মেলায় নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ৩২০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া মিষ্টি আলু ও কেশর প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় এবং সিম ৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, বাঁধা কপি ৭০ টাকা ফুল কপি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
প্রায় দেড়শত বছর আগে থেকে এই মেলা বসছে। আগে মেলায় মাছের এত কদর না থাকলেও এখন মাছের কদর বেড়েছে। বড় মাছ মেলায় তোলার ও কেনার একটা প্রতিযোগিতাও দেখা যায়। মাছের পাশাপাশি মেলার দিন নতুন শাক-সবজিতেও ভরপুর থাকে। শুধু যে মাছ আর সবজিই নয়, মেলার শিশু-কিশোরদের খেলনার দোকান ও নাগরদোলা বসেছে। সেই সঙ্গে মিষ্টান্ন ও দইয়ের একটি বড় বাজারও বসেছে মেলা চত্বরে। সারি সারি দোকান গুলোতে থরে থরে সাজানো রুই, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, ব্লাডকার্প ব্রিগেড, বাঘা আইড়, বোয়ালসহ হরেক রকমের মাছ। চলছে হাঁকডাক, দরদাম।
মেলায় মাছ কিনতে আসা মোকামতলা এলাকার ধিরেন চন্দ্র দাস জানান, উথলীর নবান্ন মেলায় বিক্রির জন্য আশপাশের এলাকার পুকুরগুলোতে শৌখিন চাষীরা মাছ মজুদ করে রাখেন। এলাকার কে কত বড় মাছ মেলায় তুলতে পারেন, যেন তারই প্রতিযোগিতা চলে মাছচাষীদের মধ্যে। এছাড়া আড়তদাররা তো আছেই। এলাকার লোকজনও প্রতিযোগিতা করে তুলনামূলক বড় মাছ কিনে বাড়িতে নিয়ে যায়। আমি নিজেও ১২ কেজি ওজনের একটা ব্রিগেড ৪০০ টাকা কেজি দরে কিনলাম।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার থেকে আসা মাছ বিক্রেতা মোসলেম উদ্দিন জানান, মেলায় ছোট-বড় মিলে ২০০ মাছের দোকান বসেছে। প্রত্যেক বিক্রেতা অন্তত ৬ থেকে ১০ মণ করে মাছ বিক্রি করেছেন। মেলায় মাছ সরবরাহের জন্য ২০টি আড়ৎ খোলা হয়। সেসব আড়ৎ থেকে স্থানীয় বিক্রেতারা পাইকারি দরে মাছ কিনে মেলায় খুচরা বিক্রি করেন। আমরা প্রায় ১০ বছর যাবৎ এই মেলায় মাছ বিক্রি করছি। লাভ
কেমন হয় জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, প্রতি বছরই মেলেতে আসি, ভালো লাগে। লাভের আশা করিনা তবে অনেক মাছ বিক্রি করতে পারি।
এলাকার প্রবীন বাসিন্দা অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক গণেশ চন্দ্র শীল বলেন, নবান্নের মেলাকে জামায় বরণ হিসেবে আমরা পালন করি। এ উপলক্ষে এলাকার সব জামায়দের আমরা নিমন্ত্রণ করে থাকি। আমাদের এলাকার জামায়রা স্ব-স্ব শশুর বাড়িতে বড় বড় মাছ ক্রয় করে নিয়ে এসে এক সাথে মিলে মিশে নবান্ন উৎসব পালন করে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন