ভোজ্যতেলের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে খুলনার পাইকারি বাজারে। তবে খুচরা বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। বর্তমানে পাইকারি সয়াবিত তেল প্রতিকেজি ১৫৩ টাকা হলেও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়টি ক্রেতার কাছে বেমালুম চেপে যাচ্ছেন বিক্রেতারা।
খুলনার বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুলনায় তেলের কোনো সংকট নেই, কিছুদিন আগেও ছিলো না।
এদিকে বাড়তি দামে তেল বিক্রি বন্ধ করতে খুলনা মহানগরীসহ জেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
শনিবার (১২ মার্চ) খুলনা নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল সেই আগের দাম ১৯০ টাকা, পামওয়েল ১৭০ টাকা আর পাঁচ লিটারের বোতল ৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। জানতে চাইলে ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়টি তারা জানেন না বলে জানান।
নগরীর বড় বাজারের পাইকারি তেল ব্যবসায়ী রেজা অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক মো. শাহ আলম বলেন, সরকারের ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণায় সয়াবিন তেলের ওপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তিনি প্রতিকেজি সয়াবিন তেল ১৮০ টাকার স্থলে ১৫৩ টাকা এবং পামওয়েল ১৫৪ টাকায় বিক্রি করছেন। আর বাজারে বোতলজাত কোনো সয়াবিন তেল নেই। তবে খোলা তেলের দাম কমতে শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, খুলনার বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কারণ খুলনায় তেল রিফাইন হয় না, হয় ঢাকায়। যদি সমস্ত বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তাহলে মিলে মিলে গিয়ে অভিযান চালাতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বড় বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণায় এ বাজারের অনেক ব্যবসায়ী খুশি হয়েছেন। এক্ষেত্রে কম দরে তেল কিনে কেউ যাতে মজুত করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের জোরালো নজরদারি চান তিনি।
বড় বাজারের অপর ব্যবসায়ী মেহেদী বলেন, বাজারে তেলের কোনো সংকট নেই। তবে ভ্যাট প্রত্যাহারে এ বাজারের অনেক ব্যবসায়ী ‘কাঙ্ক্ষিত লাভ’ থেকে বঞ্চিত হবেন।
শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর ময়লাপোতা সান্ধ্য বাজারের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে তাদের দোকানে সূর্যমুখী ও রাইসব্রান্ড তেল ছাড়া সয়াবিন তেল নেই। পাইকারি বাজার থেকে তারা তেল আনছেন না বলে জানান।
নগরীর রূপসা সান্ধ্য বাজারের তেল বিক্রেতা আব্দুল্লাহ, বক্কার ও আতাহার বলেন, আমরা প্রতিদিন খুব সামান্য তেল বিক্রি করি। পাইকারি বাজারে দাম কমলেও আমাদের কাছে যা আছে তা কম দামে বিক্রি করলে অনেক লোকসান হবে। তবে তাদের কাছে খুব বেশি তেল নেই বলেও দাবি করেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রূপচাঁদা খুলনার এক পরিবেশক বলেন, দাম বৃদ্ধির আগে তিনি প্রতিমাসে ১২শ কাটুন করে তেল নিতেন কোম্পানির কাছ থেকে। গত সপ্তাহে ৪শ কাটুন তেল পেয়েছেন। যা ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়েছে। এসব তেল তারা কী করছেন তা তিনি জানেন না। খুচরা ব্যবসায়ীরা অধিক তেল মজুত করে তার প্রাইস লেভেল ঘষে সেখানে অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন করেন। তার ঘরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের কোনো মজুত নেই। ভ্যাট প্রত্যাহারের খবর তিনি শুনেছেন। তবে সেই রেটের কোনো মাল এখনও আসেনি বলে তিনি দাবি করেন।
খুলনা জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট দেবাষীশ বসাক বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। শুধু আদালত পরিচালনাই নয়, মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ এবং জেলা জরিমানাও করা হচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।