English

27 C
Dhaka
শুক্রবার, নভেম্বর ১৫, ২০২৪
- Advertisement -

পঞ্চগড়ে ১৩০০ কেজি শসায় ১ কেজি গরুর মাংস!

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

পঞ্চগড়ে কৃষকের শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ পয়সা কেজি দরে। এখন ১৩০০ কেজি শসা বিক্রি করে ১ কেজি গরুর মাংস, ৪০০ কেজি শসায় ১ লিটার সয়াবিন তেল আর ১০০ কেজিতে ১ কেজি চাল মিলছে চাষিদের। বাজারে শসার দাম তুলনামূলক ভালো থাকলেও চাষিদের ভাগ্যে মিলছে না সেই অর্থ। বিরাট অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

চরম হতাশায় কাটছে পঞ্চগড়ের শসা চাষিদের দিন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে এবার জেলায় ২১০ হেক্টর জমিতে শসার চাষাবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। রমজানের আগেও চাষিরা শসা বিক্রি করেছেন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। রমজানের কয়েকদিন যাওয়ার পরেই হঠাৎ শসার বাজার মাত্রাতিরিক্তহারে কমতে থাকে। বর্তমানে শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ পয়সা কেজি দরে। কৃষকের কাছে ৫০ পয়সায় শসা কিনে ব্যবসায়ীরা পাঠাচ্ছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়নগঞ্জ, ফেনি, সিলেট, খুলনা, যশোর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। স্থানীয় বাজারে শসা কেজিপ্রতি ১০ টাকা এবং ঢাকাসহ অন্য বড় শহরে তা আরো বেশি দরে বিক্রি হলেই চাষিদের ভাগ্যে মিলছে সেই ৫০ পয়সাই।

ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা জানান, এক বিঘা জমিতে শসা চাষ  করে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তাঁদের। এক বিঘা জমিতে শসা পাওয়া যায় ২৫০ থেকে ৩০০ মণ। ৫০ পয়সা কেজি দরে বিক্রি করে তারা পাচ্ছেন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। বাকি টাকা তাঁদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এমনকি বর্তমানে মজুরি খরচও ওঠাতে পারছেন না তাঁরা। তাই অনেকে ক্ষোভে শসা ক্ষেতের পরিচর্যাও বাদ দিয়ে দিয়েছেন।

কৃষি বিভাগের কোনো সহযোগিতাও মিলছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। চারা রোপণের সময় চওড়া দাম দিয়ে সার কীটনাশক কিনতে হয়েছে তাঁদের। অনেকে জমি বর্গা নিয়ে ঋণ করে চাষ করেছেন। কেউ বা বাকি রেখেছেন সার কীটনাশকের দোকানে। লোকসান হওয়ায় কিভাবে সেই টাকা পরিশোধ করবেন তা নিয়ে চরম হতাশায় কাটছে তাদের দিন। ভুক্তভোগী চাষিরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার বামনপাড়া এলাকার কৃষক তজমল হক বলেন, ‘কৃষকের এই অবস্থা দেখার কেউ নেই। কৃষি কর্মকর্তারা কখনো মাঠে আসেন না। ধারদেনা করে বেশি দরে সার-কীটনাশক কিনে শসা চাষাবাদ করেছি। এখন আমাদের শসা বিক্রি করতে হচ্ছে ৫০ পয়সা কেজিতে। একদিনের শসা বিক্রি করে একটা কামলার দাম ওঠে না। ১৩০০ কেজি শসা বিক্রি করে মাত্র ১ কেজি গরুর মাংস কেনা যায়। আমরা কৃষকরা মাঠে মারা গেলেও সরকার বিষয়টি দেখছে না। ‘

চাষি শহীদ আলী বলেন, ‘ঋণ করে শসা চাষ করেছি। এখন শসার দাম শুনে মানুষ হাসে। চিন্তায় আমরা ঘুমাতে পারছি না। স্থানীয় বাজারেই শসা ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকায় আরো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কিন্ত আমরা সেই দাম পাচ্ছি না। আমাদের ঘামঝরা শসা এখন পানির দরে বিক্রি হচ্ছে। ‘

শসা চাষি আফজাল হক বলেন, আমি দেড় বিঘা জমিতে শসা চাষ করেছি। আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এখনো ১০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করতে পারিনি। যে দাম চলছে তাতে বাজারে নিয়ে শসা বিক্রি করতে গেলে ভ্যান ভাড়ার টাকাও হয় না। তাই শসা তোলা বাদ দিয়ে দিয়েছি। গাছের শসা এখন ক্ষেতেই পচছে। ‘

পানিমাছ পুকুরী এলাকার ব্যবসায়ী আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘শসার দাম কৃষকরাও পাচ্ছে না, আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও পাচ্ছি না।

শসার দাম যাচ্ছে ঢাকার বড় ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতাদের পকেটে। আর কিছু টাকা যাচ্ছে গাড়িচালকদের পকেটে। ‘ আরেক ব্যবসায়ী আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘বাজারে শসার আমদানি বাড়ায় দাম কমে গেছে। আগে এক বিঘা জমি থেকে সপ্তাহে এক দুই বস্তা শসা উত্তোলন করা গেলেও এখন শসা উত্তোলন করা হচ্ছে ৪০ বস্তা পর্যন্ত। তাই দামের এই অবস্থা হয়েছে। ‘

পঞ্চগড় বাজারের ব্যবসায়ী হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এখন কৃষকের বেশির ভাগ শসা পুরাট (প্রাপ্ত বয়স্ক)। বাজারে পাইকারদের কাছে ৪/৫ টাকা কেজি দরে কিনে সতেজ শসা আলাদা করে বিক্রি করতে হয়। বাকি শসা ফেলে দিতে হয়। তখন আমাদের ক্রয়মূল্য বেশি পড়ে যায়। তাই ৮/১০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়। ‘

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শাহ মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘রমজানে ভালো দামে বিক্রি করার জন্যই মূলত পঞ্চগড়ের চাষিরা শসা চাষাবাদ করে থাকেন।

শুরুতে তারা ভলো দামেই বিক্রি করেছেন। পরে ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে দাম অনেকটাই কমে গেছে। এখন আবার গরম বাড়তে শুরু করেছে। এ ছাড়াও সামনে ঈদ। তাই দাম সামনে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন