চট্টগ্রামের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় একজন সফল উদ্যোক্তা আক্কাস উদ্দিন, একজন ট্রেইনি ওয়েটার হিসেবে কর্মজীবন শুরু। কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় একজন সফল উদ্যোক্তা। জীবনে নানা চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে ছুঁয়েছেন সাফল্যের আকাশ। বলছিলাম চট্টগ্রামের আক্কাস উদ্দিনের গল্প।
ট্রেইনি ওয়েটার থেকে রেস্টুরেন্টের মালিক ট্রেইনি ওয়েটার হিসেবে ১৯৯৮ সালে তার কর্মজীবন শুরু হয়েছিল। তার মাসিক বেতন ছিল ৪৫০ টাকা। কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে ২০২০ সালে তিনি ঢাকা এবং চট্টগ্রামের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় একজন সফল উদ্যোক্তা। জীবনে নানা চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে ছুঁয়েছেন সাফল্যের আকাশ। চট্টগ্রামের তারকা হোটেল ও রেস্টুরেন্ট জগতে একটি সুপরিচিত নাম। এই নগরীর অন্যতম অভিজাত রেস্টুরেন্ট ‘বনজৌর’-এর অন্যতম উদ্যোক্তা। দায়িত্বে আছেন পরিচালক (অপারেশন) হিসেবে। ঢাকার গুলশানের ‘ক্যানভাস’ রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি।
পড়ালেখা শেষ করে ব্যবসায়ী হবেন সেই স্বপ্ন ছিল কলেজ জীবনে। কিন্তু গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ‘ফুড অ্যান্ড বেভারেজ’ বিষয়ে একটি ডিপ্লোমা তার জীবনের গতিপথ বদলে দেয়। ডিপ্লোমা শেষ করে ১৯৯৮ সালে তৎকালীন সময়ে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ের সেরিনা রেস্টুরেন্টে (বর্তমানে ঢাকার বিখ্যাত সেরিনা হোটেল) চাকরি নিয়েছিলেন ট্রেইনি ওয়েটার হিসেবে। নগরীর যে জিইসি মোড়ের রেস্টুরেন্টে ৪৫০ টাকা বেতনে জীবনের নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছিলেন, সেই জিইসি মোড়েই অন্যতম বিলাসবহুল রেস্টুরেন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা হিসেবে আক্কাস উদ্দিন সাফল্য ছুঁয়েছেন।
আক্কাস উদ্দিন বলেন, ১৯৯৮ সালে জীবনের কঠিন সময় পাড়ি দিতে হয়েছে। তীব্র অর্থকষ্টের মুখে মাত্র ৫ টাকা বাসভাড়া সাশ্রয় করতে ৭ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে এসেছি। বেতনের অর্থ বাঁচানোর জন্য দিনের পর দিন সকালে নাস্তা না করেই কাটিয়েছি। সারারাত রেস্টুরেন্টে নাইট ডিউটি করে দিনে না ঘুমিয়ে ছুটেছি টিউশন করতে।
তিনি জানান, ২০০১ সাল পর্যন্ত সেরিনা রেস্টুরেন্টে কাজ করতে গিয়ে রেস্টুরেন্টের খুঁটিনাটি রপ্ত করেছেন। একাগ্রতা দিয়ে কাজ শিখেছেন। ২০০১ সালে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ সিলভার স্পুন চাইনিজ রেস্টুরেন্টে যোগ দেন ক্যাপ্টেন হিসেবে। ২০০৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সিলভার স্পুনে কাজ করার পর একই বছরের সেপ্টেম্বরে যোগ দেন চট্টগ্রাম নগরীর তারকা হোটেল দি পেনিনসুলা চিটাগাং-এ। এর পর জীবনের গতিপথ সাফল্যের দিকে ছুটতে থাকে তার।
জীবনের নানা দুঃসময় অতিক্রম করে আসা আক্কাস উদ্দিন জানান, ২০০৫ সাল থেকে পেনিনসুলায় কাজ করতে গিয়ে ২০০৮ সালে প্রথম পদোন্নতি পেয়ে সহকারী ব্যবস্থাপক এবং ২০১১ সালে পেনিনসুলার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ বিভাগের ব্যবস্থাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। মেধা, পরিশ্রম, সততা আর কাজের প্রতি একনিষ্ঠতার কারণে তত দিনে আক্কাস উদ্দিনের নাম ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রামের রেস্টুরেন্ট জগতে।
পেনিনসুলা চিটাগাং-এর ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ব্যবস্থাপক হিসেবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত একটানা কাজ করার পর নিজেই অন্যতম উদ্যোক্তা হিসেবে নগরীর জিইসি মোড়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বনজৌর’ রেস্টুরেন্ট। ২০২০ সালে ঢাকার অভিজাত গুলশান এলাকায় ‘র-ক্যানভাস’ রেস্টুরেন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
নিজের সাফল্যের নেপথ্যে কি ম্যাজিক, এমন প্রশ্নের উত্তরে আক্কাস উদ্দিন বলেন, গ্র্যাজুয়েশন করার পর আমি রেস্টুরেন্টের ট্রেইনি ওয়েটার হিসেবে কাজ শুরু করি। কিন্তু শুরু থেকেই আমি কোনো কাজকেই ছোট করে দেখিনি। যেখানেই কাজ করেছি, সততার সঙ্গে নিজের মেধা, পরিশ্রম ঢেলে দিয়েছি। কাজের প্রতি ভালোবাসা, মেধা আর পরিশ্রমের কল্যাণেই আজ রেস্টুরেন্টের বিজনেসে নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। সঙ্গে কিছু সফল মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা সঙ্গী হয়েছে।
দুই পুত্র এবং এক কন্যা সন্তানের জনক আক্কাস উদ্দিন। তিনি বলেন, রেস্টুরেন্ট জগতে আমার কাজ শেখার পেছনে প্রথম অবদান রয়েছে হোটেল সেরিনার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিনা সারওয়ারের। আর আমার সব কাজের উৎসাহ আমার স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন।
আক্কাস উদ্দিন বলেন, যখন তিনি বিয়ে করেন তখন তিনি একজন ক্যাপ্টেন ছিলেন। সেই সময় থেকেই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ভালোবাসা আর উৎসাহ দিয়ে সঙ্গে আছে স্ত্রী নিলুফার। আগামী দিনের স্বপ্ন সম্পর্কে আক্কাস জানান, চট্টগ্রামে একটি তারকা মানের বুটিক হোটেল করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।