যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নতুন অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি।
আজ সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সফররত ইউএস বাংলাদেশ বিসনেস কাউন্সিসের ‘Executive Business Delegation‘-এর সাথে গোলটেবিল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমেরিকার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। নতুন কিছু কোম্পানি দেশে বিনিয়োগ করতে চায়। তারা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুবিধা ও অসুবিধার কথা বলেছেন। আমরা তাদের বলেছি যদি তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে তাহলে তাদের সকল সমস্যার সমাধান করতে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
এর আগে অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, কোভিড মহামারী এবং ইউক্রেন যুদ্ধের পটভূমিতে বৈশ্বিক যে সংকট দেখা দিয়েছে তা সরকার এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। বর্তমান পরিস্থিতি যে চ্যালেঞ্জগুলো দেখা দিয়েছে তা মোকাবেলায় সরকারী ও বেসরকারী উভয়কে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে মার্কিন অংশীদারিত্ব বিশেষ করে মার্কিন বেসরকারী খাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের বাংলাদেশের ক্রমাগত বৃদ্ধির জন্য পাশে থাকার আহবান জানান।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করায় বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আগামীর সিংহভাগ বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
টিপু মুনশি বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তোরণ করবে যারফলে কিছু উন্নত অর্থনীতির দেশে আমাদের শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার ব্যাহত হবে। কিন্তু জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি এই যাত্রায় মার্কিন সরকার ও মার্কিন বেসরকারী সংস্থাগুলিও আমাদের পাশে থাকবে। এছাড়া, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আমাদের সক্ষমতা এবং অনুকূল পরিবেশের প্রতি আরও আস্থাশীল হবে। এই ধরনের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল পারস্পরিক সুবিধার জন্য সহযোগিতার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলেও উল্লেখ করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিচক্ষণ সরকারী নীতি এবং উন্মুক্ত বাজারের নেতৃত্বে বেসরকারী, রপ্তানিমুখী উৎপাদন, উচ্চ উৎপাদনশীল কৃষি এবং একটি ক্রমবর্ধমান পরিষেবা খাত আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পৃথিবীর অনেক দেশের জন্য উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে এবং স্বীকৃত পেয়েছে। বিগত কয়েক দশক ধরে প্রায় ৭% গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতু, মেট্রো-রেল এবং পায়রা বন্দর, কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর এবং পাওয়ার স্টেশন, কর্ণফুলী ট্যানেলসহ অন্যান্য মেগা-প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র যেগুলো সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক উদ্যোগের অংশ তা রপ্তানি ও আমদানির দৃশ্যপটকে আমূল পরিবর্তন করছে যার ফলে আরও বেশি বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে যখনই জিসিন-পত্রের দাম বাড়ে তখন তা নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। বাজারে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয় হবে। ভোক্তা এবং ব্যবসায়ী উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষণ হবে এটাই আমরা চাই। এ লক্ষ্যে আমরা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দিয়ে বাজার মনিটরিং করে থাকি। অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অনেককে জেল জরিমানা করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির লোকবল কম থাকার কারণে পর্যাপ্ত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।
সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিয়ে অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, যদি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করেন তাহলে সহজেই বুঝা যায় সারা বিশ্ব একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইংল্যান্ডের দোকানেও যখন তিনটার বেশি টমেটো কেনা যাবে না বলে রিস্টিক করে দেয়। জার্মানির দোকানগুলোতে তেলের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়। তখন আমাদের মতো দেশে এ সংকটের বাহিরে থাকতে পারে না। মুহুর্তের মধ্যে হয়তো সমাধান হবে না তবে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে যাতে করে গ্লোবাল এই দুরবস্থার মধ্যে দেশের মানুষ ভালো থাকে।
সভায় আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমদ এবং US-Bangladesh Business Council-এর সভাপতি অতুল কেসাব, এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মাহবুবুল আলম অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।