তীব্র গরমে একেবারে অতিষ্ট মানুষ। এর মাঝে চলছে রোজা মাস। ইফতারিতে এক টুকরো তরমুজ যেন দারুন তৃপ্তি দেয় রোজাদারদের। বাজারে এখন প্রচুর তরমুজ। কিন্তু এই তরমুজ এখন মধ্যবিত্তদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তরমুজ এখন বিক্রি হচ্ছে কেজি দরেও। এরপরও সাধারণ মানুষ সেই তরমুজ কিনতে পারছে না। ৩৫০-৪০০ টাকার নিচে মধ্যম আকারের কোনো তরমুজ বাজারে নেই।
২ দিন আগে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া তরমুজ এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। কিন্তু পিস হিসেবে এতদিন বিক্রি হওয়া তরমুজ হঠাৎ কেজি দরে কেন বিক্রি হচ্ছে, জানতে চাইলে ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আর বিক্রেতারা জানিয়েছেন চমকপ্রদ তথ্য। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি ফল তরমুজ। চাষও হচ্ছে প্রচুর। তরমুজের চাষ হয় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, সন্দ্বীপ, বরিশাল, খুলনায়। সম্প্রতি পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও নাটোরেও চাষ হচ্ছে। এরপরও কেন এত দাম, জানতে চাইলে একজন ব্যাবসায়ী জানান আমরা শ হিসাবে কিনে আনি। শ হিসেবেই খুচরা দোকানিদের কাছে বিক্রিও করি। তারা বেশি লাভ করার জন্যই অনেকেই কেজি হিসেবে বিক্রি করেন। তবে, লকডাউন ও রোজার কারণে এবার তরমুজের দাম গত বছরের চেয়ে বেশি, প্রায় ডাবল।
এরপরও সাধারণ মানুষ সেই তরমুজ কিনতে পারছে না। বর্তমানে তরমুজের আকাশচুম্বী দামে ক্রেতারা একবারে দিশেহারা। এজন্য অনেকেই ফেসবুকে শুরু করেছেন তরমুজের দাম নিয়ে সমালোচনা। এমন সমালোচনা শুরু হলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেটে প্রশাসনের কোন অভিযান কিংবা তদারকি করতে দেখা যায়নি। মঙ্গলবার ২৭ এপ্রিল নগরীর দক্ষিণ সুরমা তরমুজ বিক্রেতা শানুর মিয়া বলেন, মাঝারি আকারের তরমুজ (গড়ে ৬ কেজি ) আজ একশো কিনেছি ৩০ হাজার টাকায়। একটার দাম পড়েছে ৩০০ টাকা। ৮০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করছি ৪৮০ টাকায়। ১০০টি বড় তরমুজের দাম ৪০-৪৫ হাজার টাকা। প্রতিটির ওজন ৮/৯ কেজি। বিক্রি হচ্ছে ৪৮০-৫৪০টাকায়।
শ হিসেবেই খুচরা দোকানিদের কাছে বিক্রিও করি। তারা বেশি লাভ করার জন্যই কেজি হিসেবে বিক্রি করেন। তবে, লকডাউন ও রোজার কারণে এবার তরমুজের দাম গত বছরের চেয়ে বেশি, প্রায় ডাবল।
তরমুজ কেনা বিষয়ে বলেন, ‘শ হিসাবে কিনি, এটা সত্যি। কিন্তু মাঝারি আকারের একটা তরমুজ কেনা পড়ে ৩০০ টাকার ওপরে। কেজি দরে সেটা আমরা ৩৬০-৩৭০ টাকায় বিক্রি করি। এটুকু লাভ না করলে আমরা পরিবার নিয়ে বাঁচবো কিভাবে?
বাজার ঘুরে তরমুজের দাম দিন দিন বেড়ে যাওয়া ও কেজি দরে বিক্রির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলেন, গতবছর যে এক শ তরমুজ ১২-১৫ হাজার টাকায় পাইকাররা কিনতেন, সেগুলোই এবার কিনতে খরচ পড়ছে ২২-২৪ হাজার টাকা। আর বিক্রি করছেন ২৫-৩০ হাজার টাকায়।
নগরীর দক্ষিণ সুরমার ফলের আমদানি কারক মেসার্স হাজী মোঃ মনির মিয়ার পরিচালক সেলিম আহমদ জানান, এবার রোজায় আম আসেনি। প্রচুর গরমের কারণে মানুষের কাছে তরমুজের চাহিদা বেশি। সে তুলনায় সরবরাহ কম। লকডাউনের কারণে ট্রাক ভাড়া দ্বিগুণেরও বেশি। পথে ফেরিঘাটে, রাস্তায় বেশি খরচ দিতে হয়। তাই মোকামে আসা পর্যন্ত দাম অনেকে বেড়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, এবার ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বরিশাল ও সাতক্ষীরা এলাকায় নদী ভাঙনের কারণে পানি ঢুকে ক্ষেতের অনেক তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে। গত বছরে যে তরমুজের পিস ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি করেছি, সেই তরমুজই এবার ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।