জ্বালানি আমদানীর ব্যবহার বাড়াতে না পারলে বর্তমানে ধারা অব্যাহত থাকলে ও বাষির্ক আমদানী ব্যয় দাঁড়াবে ২০৩০ সালে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার । সেই জ্বালানি বিক্রি করে কী পরিমাণ অর্থ আসবে তা এখনো নিশ্চিত না । তাই সার্বিক বিষয় নিয়ে একটি সমীক্ষা জরুরি । উপরের কথাগুলো বলেছেন, তত্ববধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জ্বালানি বিষয় বিশেষ সহকারী ও বুয়েটের পেট্রোলিয়াম ও মিনারালস রির্সোসের ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তামিম।এনার্জি এন্ড পাওয়ার আয়োজিত বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের ৫০ বছর শীর্ষক এক আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসাবে তিনি উপরের কথাগুলো বলেছেন।
তিনি মনে করেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহন কওে তা অনুসরণ করা যাচ্ছেনা। বরং সঠিকভাবে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ চাহিদা প্রাক্কালন করে ১০ বছর সময়কালকে বিবেচনায় রেখে ৫ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা করা উচিত, যার বাস্তবায়ন প্রতি বছর পর্যালোচনা করে পরের বছরের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা যাবে।মোল্লাহ আমজাদ হোসেনের সঞ্চালণনায় আলোচ্য বিষয়ের উপর মূল উপস্থাপনায় এনার্জি এন্ড পাওয়ারের কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ইঞ্জি. আবদুস সালেক বলেন, জ্বালানি খাতে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় দুটি সম্ভবনা নষ্ট করেছে। এর প্রথমটি হচ্ছে মায়ানমার থেকে গ্যাস রফতানির ত্রিদেশীয় পাইপ লাইন না করা এবং উত্তরাঞ্চলের কয়লা ক্ষেত্র উন্নয়নে যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারা। অন্যদিকে ২০০০ সালের পর থেকে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে জল ও স্থলে কার্যকর কোনো সাফল্য আসেনি। ফলে দেশকে পর্যায়ক্রমে আমদানী নির্ভর হয়ে পড়তে হয়েছে। যা বঙ্গবন্ধুর জ্বালানি উন্নয়ন দর্শনের পরিপন্থী।
বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভলপমেন্ট (বিল্ড) এর চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান বলেন, কোন কোন সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলেও ৫০ বছরে আমাদের অর্জন কম নয়। উন্নত দেশের কাতারে যে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে। এরজন্য জ্বালানি সরবরাহের কোনো বিকল্প নেই। আমি মনে করি লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমদানী কমিয়ে নিজস্ব জ্বালানি সম্পদ ব্যবহারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এটার জন্য নিজস্ব কয়লা ব্যবহাওে কাজ শুরু করে এবং ব্যাপকভিত্তিক তেল গ্যাস অনুসন্ধানের কোনো বিকল্প নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব বিভাগের অনারারী প্রফেসর ড. বদরুল ইমাম বলেন, বাংলাদেশের ভূ-গঠনের কারণে এখানে গ্যাস সংকট থাকার কোনো কারণ নেই। বরং গৌষ্ঠী স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিতে দিয়ে জনগনের স্বার্থ উপিেক্ষত হয়েছে বলেই গ্যাস অনুসন্ধান করা যায়নি। বাপেক্স, আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি, দেশী বিদেশী সকল উদ্যোগকে নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক অনুসন্ধান ছাড়া আমদানী নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার কোনো উপায় নেই।পেট্রোবাংলা ও বিপিসির সাবেক চেয়ারম্যান মোকতাদির আলী বলেন, কৃষি ও শিল্প খাতে আজ বাংলাদেশের যে উন্নয়ন তার পেছনে রয়েছে জ্বালানি খাত। সংকট হচ্ছে আমরা কোনো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কৌশল নিয়ে এগুতে পারছিনা। সবকিছুই হচ্ছে এডহক ভিত্তিতে। যার কারণে আমরা খুলনা পর্যন্ত পাইপ লাইন নিয়ে গেলেও সেখানে এখনো গ্যাস সরবরাহ দেয়া যায়নি। কিন্তু আবার বগুড়া থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত গ্যাস পাইপ লাইন হচ্ছে। পাইপ লাইন নেয়া হচ্ছে গোপালগঞ্জ। কিন্তু গ্যাস আসবে কোথা থেকে।
যোগ্য পেশজীবীদের আজ জ্বালানি খাতে কোনো গুরুত্ব নেই। সেখানে বসানো হচ্ছে আমলাদের। ফলে সঠিক সিদ্ধান্ত হচ্ছেনা, ঝুলে যাচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়ন।ইনস্টিটিউট অব ইনভারমেন্টাল স্টাডিজের পরিচালক প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, পিএসএমপি অনুসাওে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আসছে না। আবার রামপাল, পায়রা এবং মাতারবাড়ি কেন্দ্রগুলো চলবে আমদানী করা কয়লায়। অথচ উত্তরাঞ্চলে রয়েছে বিপুল পরিমান উন্নত কয়লা। আরো আবিষ্কারের সম্ভবনা প্রবল। ফলে নিজস্ব কয়লা উত্তোলন ও ব্যবহাওে সিদ্ধান্ত নেয়া খুব জরুরি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপাটমেন্ট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের প্রফেসর এবং চেয়ারপারসন, উন্নয়ন অন্বেষণ ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমির জ্বালানির ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বব্যাপী ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার কমার বিষয় প্রত্যাশা করা হলে তা অর্জিত হয়নি। বরং মনে হচ্ছে ২০৫০ সালে বিশ্ব নেটজিরো লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না।
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে জ্বালানির ব্যবস্থাপনা ও দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত কওে জনগণের করের টাকার অপচয় বন্ধ করতে হবে।বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুতর্জা আহমেদ ফারুক চিশতি বলেন, বাপেক্স এককভাবে নয় বরং বাপেক্স, আইওসি, দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগ সবকিছু ব্যবহার করে ব্যাপক অনুসন্ধান শুরুর কোনো বিকল্প নেই।প্রফেসর তামিম বলেন, বাপেক্সকে আর কাগিরি কোম্পানি হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। অবশ্য একটি ইএনপি কোম্পানি সরকার তার হাতের মুঠোয় রেখে তৈরীই করেছিল ব্যর্থ হওয়ায়ার জন্য। কেননা ‘ড্রিলিং বিট’কেনার জন্য পারচেজ কমিটিতে যেতে হলে ঐ কোম্পানির আর যা হোক অনুসন্ধান করতে পারবেনা। বরং বাপেক্সকে একটি শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা কোম্পানি হিসাবে ঢেলে সাজানো উচিত যার কাজ হবে জল ও স্থলভাগে তেল গ্যাস অনুসন্ধান কাজ সমন্বয় করা।তিনি বলেন, আইওসিরা দেশের গ্যাস রফতানির যে অনুমতি চেয়েছিল তা গ্রহন না করা সরকারের ভুল ছিল। কেননা তা ছিল কার্যত মার্কেট সিগনাল। বাংলাদেশের গ্যাস কেনার প্রথম অধিকার সংরক্ষণ কওে এই অনুমতি দেয়া হলে আইওসি তেল গ্যাস অনুসন্ধানে ব্যাপক বিনিয়োগ করতো। অন্যদিকে দেশ কয়লা উত্তোলন ও তার ব্যবহারেরও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তাই এখন ধীওে ধীওে আমরা আমদানী নির্ভর হয়ে পড়ছি। ফলে এতে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার এবং দামের অস্থিরতার ঝুকি থাকবেই।